দর্শন বলতে কি বোঝায়? দর্শন কিভাবে বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত?

দর্শন বলতে কি বোঝায়? দর্শন কিভাবে বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত? প্রশ্ন/উত্তর

দর্শন বলতে কি বোঝায়? দর্শন কিভাবে বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত?

————-

উত্তরঃ দর্শন হলো জগতের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা। যে কোনো সত্য বা তত্ব-সন্ধানী বৈজ্ঞানিক শিক্ষাকে দর্শন বলা যেতে পারে। আর যে কেউ এ তত্ব উদঘাটনের কাজে ব্যাপৃত রয়েছেন, হতে পারেন তিনি একজন পদার্থবিজ্ঞানি, প্রাণিবিজ্ঞানী, মনস্তত্ববিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, অংকশাস্ত্রবিদ, অধিবিদ্যাবিধ তাকে দার্শনিক বলা যেতে পারে।

ব্যাবহারিক অর্থে দর্শন সকল প্রকার জ্ঞানের একীভুতকরণ বুঝায়। এ একই অর্থে দর্শন পাঠের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে দেয়া সত্যকে শৃঙ্খলাবদ্ধকরণের চেস্টা বুঝায়। সোজা কথা, জগতের যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা দেয়ার চেস্টাকে দর্শন বলে। জাগতিক বস্তনিচয় এ ঘটনাবলির সমগ্রতা রক্ষার্থে বিচার-বিশ্লেষনের মাধ্যমে যে অনুসন্ধান তাকে দর্শন বলা হয়।

দার্শনিক ওয়েবার বলেছেন, “দর্শন হলো প্রকৃতি সম্পর্কে এক সামগ্রিক ধারণা লাভের অনুসন্ধান, বস্তর সার্বিক    ব্যাখ্যার চেষ্টা। বস্তত জগৎ – জীবন সম্বন্ধে বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পরিচ্ছন্ন ধারনাকে দর্শন বলা হয়।

——————

দর্শন কিভাবে বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত?

দর্শন এবং বিজ্ঞানকে প্রায়শই ভিন্ন বা বিরোধপূর্ণ মহাবিশ্বে বলে মনে করা হয়। একদিকে, “দর্শন” শব্দটি আমাদের একটি অনুমানমূলক, তাত্ত্বিক, প্রায় কাব্যিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে ভাবতে বাধ্য করে।

অন্যদিকে, বৈজ্ঞানিক কাজ অবিলম্বে গণিত, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং উপকরণ এবং কংক্রিট জিনিসগুলির হেরফেরের সাথে যুক্ত।

বাস্তবে, দর্শন এবং বিজ্ঞান  তারা একে অপরের থেকে এতটা দূরে নয়। দর্শন এবং বিজ্ঞান এমন অনেক গুণাবলী ভাগ করে যা তাদের ডিগ্রীর সাথে সংযুক্ত করে যে, কিছু সময়ে, তাদের পার্থক্য করা কঠিন।

দর্শন ও বিজ্ঞান হাত ধরাধরি করে চলেছে – অন্তত প্রাথমিক যুগে। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখি এ দুটো সম্পূর্ণ পৃথক পদ্ধতি (methodology) মেনে চলে। দার্শনিক পদ্ধতি ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অভিন্ন নয়। হয়ত নীতিগতভাবে এদের মধ্যে কোনো বৈসাদৃশ্য থাকার কথা ছিল না। কারণ প্রাচীনকালে সভ্যতার ঊষালগ্নে আমরা বিজ্ঞানকে দার্শনিক বিষয়বস্তু হিসেবেই আলোচিত হতে দেখি। বলা হতো, Natural Philosophy বা ভৌত দর্শন। নিউটনের ‘ন্যাচারালিস ফিলোসফিয়া প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা’ এর প্রমাণ। পদার্থবিজ্ঞানে যুক্তির প্রয়োগ, আরোহী-অবরোহী পদ্ধতির প্রয়োগ – এসবই দার্শনিক ভাবপ্রসূত। কিন্তু ক্রমশ গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান শাস্ত্রীয় দর্শন থেকে আলাদা হয়ে বর্তমান বিজ্ঞানের ভিত্তিভূমি রচনা করেছে। মনে হয়, সপ্তদশ শতকের দর্শন থেকে বিজ্ঞানের ধারণাসমূহের সৃষ্টি। আর সপ্তদশ শতকের দর্শন বুঝতে হলে গ্রিক উপলদ্ধি করতে হবে। গ্রিক দর্শনের দুই মহারথী প্লেটো-অ্যারিস্টটলের দর্শন আমাদের বুঝতে হবে। গ্রিক দর্শনের সবচেয়ে বড়ো গুণ হলো এটি একেবারে মৌলিক যেকোনো প্রতিভাস ব্যাখ্যা করতে প্রয়োজনীয় দার্শনিক ধারণা গ্রিক দার্শনিকরা নিজেরাই তৈরি করেছেন। এই ভাবধারা দুহাজার বছরের পুরনো ভাবধারা; কাজেই বলা চলে এই মতবাদগুলো বর্তমানকালে উপযোগরিক্ত। তবু এ দর্শনের পদ্ধতি, প্রশ্ন করার ক্ষমতা, অনুধাবনের তীক্ষèতা প্রশংসনীয়। ঐতিহাসিকভাবে গ্রিক দর্শন “বিজ্ঞানের সূতিকাগার” এবং ইউরোপীয় রেনেসাঁ আধুনিক বিজ্ঞানের সূত্রপাত করে।

দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে আরো একটা সাদৃশ্য হলো-

সভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় অতীতে এমনও সময় ছিল যখন দর্শন ও বিজ্ঞানের মধ্যে আদৌ কোন সীমারেখা ছিল না। দর্শন ও বিজ্ঞান তখন একই আসনে অধিষ্ঠিত ছিল। পদার্থ বিজ্ঞানের (Natural Philosophy) নামে অভিহিত করা হতো। এই কিছুদিন আগেও মনোবিজ্ঞানও দর্শনের আওতাভুক্ত ছিল। আজকের রাজনীতির বিষয় “রাষ্ট্রবিজ্ঞান” পূর্বে “রাষ্ট্রদর্শন” নামে পরিচিত ছিল।

এর কারণ হচ্ছে, দর্শন ও বিজ্ঞানের বিষয়বস্তু মূলত এক ও অভিন্ন। দর্শন ও বিজ্ঞান উভয়ের জীবন ও জগতের রহস্য উদঘাটন করতে চায়। জটিল বিষয়কে সহজ করা, অজানা বিষয়কে জানা, দুর্বোধ্য বিষয়কে সুবোধ্য করা উভয়ের লক্ষ্য। উভয়ের মূলে রয়েছে সত্যানুসন্ধানের অপ্রতিহত বাসনা । তাই জগত ও জীবনের ব্যাখ্যা হিসেবে দর্শন ও বিজ্ঞান একই পথের যাত্রী।

———-

লেখক: ইয়াসিন আরাফাত

দর্শন বিভাগ (২০-২১), সরকারি তিতুমীর কলেজ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top