কিভাবে খেজুর গাছের রস দেয় ? খেজুর গাছের রস প্রক্রিয়াকরণ

কিভাবে খেজুর গাছ রস দেয়? খেজুর গাছের রস প্রক্রিয়াকরণ

সাধারণত সব গাছ মূলের মাধ্যমে পানি শোষণ করে। এই পানি পাতায় পৌঁছে গেলে পাতায় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি হয়। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে যে খাবার তৈরি হয়, তা গ্লুকোজ। গ্লুকোজ পরে সুক্রোজ বা চিনিতে রূপান্তরিত হয়। গাছের বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার জন্য এই চিনি খরচ হয়ে যায়।

খরচ হওয়ার পর যদি চিনি বেঁচে যায়, তাহলে চিনিগুলো স্টার্চ নামক অদ্রবণীয় জটিল শর্করা হিসেবে জমা থাকে। চিনি মিস্টি হলেও স্টার্চ কিন্তু মিষ্টি নয়। বর্ষাকালে মাটিতে প্রচুর পানি থাকে, তাই মূলের মাধ্যমে প্রচুর পানি শোষণ করে পাতায় প্রচুর খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে মাটিতে পানি কম থাকে, তাই পানির অভাবে পাতায় কম খাদ্য তৈরি হয়। শীতকালে স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য খেজুর গাছ অতিরিক্ত খাদ্য মজুদ করে রাখে।

তাপমাত্রা কমতে শুরু করলে মূল থেকে পানির শোষণ কম হতে থাকে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সংকেত খেজুর গাছের কোষে এক ধরনের এনজাইম ক্ষরণ হতে থাকে এই এনজাইমের প্রভাবে জমিয়ে রাখা স্টার্চ ভেঙ্গে আবার চিনিতে পরিণত হয়। মূল থেকে উঠে আসা পানির সাথে এই চিনি মিশে একটি মিষ্টি সরবত তৈরি হয়। এটাই হলো খেজুরের রস। যেহেতু মূল থেকে উঠা পানি উপরের দিকে ধাবিত হয়, তাই রস উপরের অংশে থাকা কোনো ক্ষত দিয়ে বের হয়। যেটা আহরণকারীরা গাছের ডগার ঠিক নিচের অংশে কেটে বের করে।

খেজুরের রস বা খেজুর রস হল খেজুর গাছ থেকে সংগ্রহকৃত রস। সাধারণত মাটির হাড়ি দিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। তবে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে মাটির বদলে প্লাস্টিক দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। খেজুরের রস দিয়ে ফিরনি, পায়েস এবং খেজুরের রস থেকে উৎপন্ন গুড় দিয়ে ভাঁপা পিঠা এবং গাঢ় রস দিয়ে তৈরি করা হয় মুড়ি, চিড়া, খই ও চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলি। খেজুরের রস পান করলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়। এতে উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে খেজুরের রস পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

রস সংগ্রহ

রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি

খেজুর শুষ্ক ও মরু অঞ্চলের উদ্ভিদ হওয়ায় গঙ্গার নিম্ন অববাহিকার খেজুর গাছে যথেষ্ট শাঁসযুক্ত অর্থাৎ উৎকৃষ্ট খেজুর হয় না। তাই এটি খাদ্য হিসেবে খুব একটা ব্যবহার হয় না। তবে এই গাছের রস আকর্ষণীয়।

সংগ্রহ

খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে খেজুর গাছের মাথার অংশকে ভালো করে পরিষ্কার করা হয়। এরপর পরিষ্কার সাদা অংশ কেটে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসিতে রস সংগ্রহ করা হয়।

শীতের মৌসুমে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে গাছের মাথার সাদা অংশ পরিষ্কার করে গাছে হাড়ি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। সকাল হলে সেই হাড়ি নামিয়ে আনা হয়। রস দিয়ে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে সাধারণত বিক্রি করে দেওয়া হয়। তবে গাছিরা যে হাড়ি ঝুলিয়ে রাখে তাতে অনেক সময় কীট পতঙ্গ প্রবেশ করে অস্বাস্থ্যকর রসে পরিণত করতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top