মঙ্গোল সেনাপতি বারকে খানের জীবনী- ইতিহাস- History of Islam- ইসলামের ইতিহাস

মঙ্গোল সেনাপতি বারকে খানের জীবনী -History of Islam- ইসলামের ইতিহাস

মঙ্গোল সেনাপতি বারকে খানের জীবনী  ।। মহাবীর বার্কে খান (Berke Khan)  ও   গোল্ডেন হোর্ড (Golden Horde,  সোনালী  তাবু বা সিরওর্দাই খানাত)

বার্কে খানের বংশ পরিচিতি:

দাদা:   চেংগিস খান ( তেমুজিন খান)

পিতা : জোচি  খান,

চাচারা: ওগেদাই খান, চাগাতাই খান, তোলুই খান। (তোলুই খানের পুএ হালাকু খান)

ভাই :  বাতু খান।

মোংগলদের ইতিহাসে  এক অবিস্মরণীয় বীরের নাম বার্কে খান যিনি প্রচলিত মোংগল ঝড়ের বিরুদ্ধে লড়াই

করে মোংগলদের বর্বর ও নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকে বদলে দিয়েছিলেন। মুসলিম বিশ্বের তৎকালীন  মামলুক সুলতান রুকনুউদ্দীন বাইবার্সের সাথে সন্ধি ও বন্ধুত্ব্ব স্থাপন করে  তার চাচাতো ভাই হালাকু খানের বিশ্ব বিজয়ের আশাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছিলেন।

বারকে খানের জীবনী

বার্কে খান ঐসব ব্যাক্তিদের মধ্যের একজন, যাদের ইসলাম গ্রহণ ইতিহাসের ধারাকে চিরতরে বদলে দিয়েছে।

বার্কে খান যিনি ছিলেন চরম মুসলিম বিদ্বেষী চেংগিস খানের সরাসরি পৌএ ছিলেন।  তিনি ১২৪৮ সালে ইসলাম গ্রহন করেন এবং ১২৫৭ সালে মোংগল রাষ্ট্র সংঘের মধ্যে সবচেয়ে প্রতাবশালী ইউরোপ এশিয়া বিস্তৃত সিরওর্দা খানাতের  ( Golden Horde) সিংহাসন আরোহণ করেন।

চেঙ্গিস খানের অনেক পুএ ছিল তবে তার  মৃত্যুর সময়  সন্তানদের মধ্যে জীবিত ছিলেন চারজন।

জোচি খান, তোলুই খান, ওগেদাই, চাগাতাই খান।

এই চারজনের মধ্যে চেঙ্গিস খান তার সাম্রাজ্য ভাগ করে দিয়ে যান।

★বড় জোচি ভাগের পড়ে আজারবাইজান সহ ইউরেশিয়ার কিছু অঞ্চল।

★তোলুইয়ের ভাগে পড়ে মোঙ্গল সাম্রাজ্যের মূল ভূখন্ড কারাকোরাম। কারাকোরাম ছিল মূল কেন্দ্র। কেন্দ্রিয় কমান্ড এখান থেকেই দেওয়া হতো।

★বাকি দুজনের ভাগে পড়ে সাম্রাজ্যের বাকিঅংশ।

চেঙ্গিস খানের পুত্রদের মধ্যে জোচি খান এবং তার ছেলেরা ছিল মুসলিম বান্ধব। তার ছোট ছেলে ছিল একজন ধার্মিক মুসলিম। অন্যরা ইসলামবিদ্বষে একধাপ এগিয়ে ছিল। নৃশংসতায় দাদার যোগ্য উত্তরসূরি। চেঙ্গিস খানের পুত্রদের মধ্যে জোচি খান ছিল বীরত্ব, সাহসিকতায় ছিল অন্যদের চেয়ে সেরা।

জোচি খানের দুই ছেলে। বড় ছেলে মহাবীর বাতু খান, ছোট ছেলে মহাবীর বার্কে খান। বাতু খানের বাল্য শিক্ষক  একজন মুসলিম। তার নাম হাজি আব্দুর রহিম বাগদাদি।  বাতু খান ছিল ইউরোপের জীবন্ত ত্রাস।

বার্কে খান মঙ্গু খানকে সিংহাসনে বসিয়ে ফেরার পথে বুখারায় থামনে। সেখানে তার সাথে সাক্ষাত হয় এক কাফেলার। যে কাফেলাতে ছিল সাইফ উদ্দীন দরবেশ। যার প্রণোদনায় বার্কে খান  দ্বীন ইসলাম গ্রহহণ করেন। তার সাথে তার ভাতিজা দুধর্ষ সেনাপতি নোগাই খানও দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তি কয়েক বছরের মধ্যে বার্কে খানের অধিকাংশ জেনারেল ইসলাম গ্রহণ করেন।

এসব কারণে চেঙ্গিস খানের অন্যান্য বংশধরেরা জোচি খানের পরিবারকে ভালো চোখে দেখতো না। যার ফলশ্রুতিতে আততায়ীর হাতে খুন হোন জোচি খান।

জোচি খান তার প্রাপ্ত অংশ নিয়ে গড়ে তুলেন নিজস্ব রাজ্য। যা চেঙ্গিস খান পরবর্তী দুনিয়া কাঁপানো মোঙ্গল রাজ্যের মধ্যে অন্যতম। জোচি খান ছিলেন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ  চেঙ্গিস খানের সন্তানদের মধ্যে। বাবার এই গুণ একটু অতিমাত্রায় পেয়েছিলেন জোচি পুত্র বাতু খান। কৈশোরে একদিন সেনাবাহিনীর সামনে দাড়ি প্রতিজ্ঞা করে বলেছিলেন ‘ হে বীরপুরুষেরর দল, তোমাদের তরবারিতে মরিচা ধরে গিয়েছে। আমি তোমাদের নিয়ে যাবো ভল্গা নদীর ওপারে। তান্ডব চালাবো ইউরোপের কাপুরুষদের উপর’। এই ঘোষণা দিয়ে থেমেন থাকেননি। বাবা জোচি খান বেঁচে থাকতেই ভল্গা নদী পার হয়ে ইউরোপের ঝড় বয়ে দেন মহাবীর বাতু খান। সহজেই জয় করেন বর্তামন হাঙ্গেরিসহ ডালমাসিয়া উপকূল পর্যন্ত বৃহৎ অঞ্চল। সেখান থেকে আহরণ করেন  স্বর্ণ, রুপ্য সহ অগণিত সম্পদ। যার ফলে তিনি স্বর্ণ দিয়ে তার তাবু সাজিয়ে রাখতেন। এই সোনালি তাবু থেকেই ‘সিরওর্দা’ শব্দের উৎপত্তি। যার অর্থ ‘সোনালি  তাবু’। জোচি খানের মৃত্যুে পর বাতু খান সিংহাসনে বসেই রাজধানী এশিয়া থেকে রাশিয়ায় স্থানান্তর করেন। যার নাম হয় সারাই। এরপর থেকেই বাতু খান শাসিত রাজ্যের নাম হয় সিরওর্দা খানাত  বা সোনালি তাঁবু। যা ইতিহাসে Golden  Horde নামে পরিচিত। বাতু খানেরর রাজত্বকাল ১২২৭-১২৫৫ পর্যন্ত। তার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তার ছেলে। সারতাক খানের পর উলাগচি খান।

বারকে খানের জীবনী

এরপর মোঙ্গল রাজ্য সিরওর্দার সিংহাসনে আসে চমক। মোঙ্গল সাম্রাজ্য আলোডন তুলে ১২৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহন করেন নিষ্ঠাবান মুসলিম জোচি পুত্র মহাবীর বার্কে খান। যে চেঙ্গিস খানের নাতি হওয়ার পরও ১২৪৮ সালে দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। বার্কে খানের প্রতি অন্যান্য মোঙ্গল খানরা অসন্তুষ্ট থাকলে কার্যকর কিছু করার সাহস ছিল না। কারণ বার্কে খান ছিলেন বাবা, ভাইয়ের মতো বীর সেনাপতি।

সিংহাসনে বসেই কেন্দ্রীয় কমান্ড কারাকোরামকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বসেন। কেন্দ্রীয় কমান্ড কাফির হওয়ার কারণে কেন্দ্রিয় কমান্ডের আনুগত্য অস্বীকার করে বসেন। নিজেকে মোঙ্গল খান ঘোষণা না দিয়ে নিজেকে একজন স্বাধীন মুসলিম শাহানশাহ বলেই ঘোষণা দেন। এতে পিলেচ মকে উঠে অন্যান্য মোঙ্গল খানদের। কারাকোরামের মঙ্গু খানেরও কিছু করার ছিল না। কারণ মোঙ্গল সাম্রাজ্যের একমাত্র খানাত হচ্ছে সিরওর্দা যা কোনোদিন যুদ্ধে হারেনি। অন্যান্য খানাক বা পুত্ররা যুদ্ধে হারলেও জোচি খানের ছেলেরা হারেনি। কেন্দ্রীয় কমান্ড নীরবে হজম করে সব। এছাড়াও সিরওর্দার প্রভাব তখন ইউরোশিয়া পেরিয়ে ইউরোপের বিশাল অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।

বার্কে খান সিংহাসেনে বসে রাজধানীর স্থান পরিবর্তন করে রাশিয়ার স্ট্যালিনগ্রাদের নিকটে স্থানান্তর করেন। নতুন নাম দের সারাই বার্কে। সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমে ক্ষমতা ও শক্তির শীর্ষে পৌঁছে যান। বড় ভাই মহাবীর বাতু খান ইউরোপের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিক পর্যন্ত যেভাবে দাপিয়ে বেড়িছেন এবং খ্রিষ্টান রাজ্য প্রধানত করেছিলেন তার পিছনে বার্কে খানের অবদান ছিল। বাতু খানের সময়েই বার্কে খান রিয়াজান, সুজদাল, হাঙ্গেরি এবং রাশিয়ার বহু রাজ্য করায়ত্ব করে নেন।  বাতু খানের পর সারতাক খান, উলাগিচ খানের হাত থেকে যেসব রাজ্য হাতছাড়া হয়েছিল তা সিংহাসনে আরোহণ করেই বার্কে খান সব উদ্ধার করেন।

বার্কে খান বাইজেন্টাই সাম্রাজ্যের বুলগেরিয়া ও থ্রেস পর্যন্ত দখল করে নেয়। এবং মোঙ্গলদের থেকে খাওয়ারিজম সহ মা-ওয়ান নাহারের অর্ধেক বার্কে খানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

বার্কে খানের দাপটে গ্রিক অর্থোডক্স খ্রিষ্টানদের ধর্ম গুরু বাইজেন্টাইন সিজার আনুগত্য স্বীকার করে কর প্রদান করে। কারণ কনস্টান্টিনোপল বার্কে খানের পদানত হওয়ার হুমকি ছিল।

বারকে খানের জীবনী

১২৬০ খ্রি. বাইবার্স মামলুক সিংহাসনে বসেই সিরওর্দার শাসক বার্কে খানকে সারকোসিয়ায় ইসলামের আলো প্রজ্বলনের জন্য সাধুবাদ এবং শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। সারকোসিয়ার একটা জনপদ কিপচাক। যেখানা বাইবার্সের জন্ম। ১২৬২ সালে বাইবার্স কর্তৃক আব্বাসি খিলাফার পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য শুভেচ্ছা এবং উদীয়মান দুই মুসলিম শক্তির চিরস্থায়ী চুক্তির প্রস্তাবসহ দূত পাঠান। বার্কে খানের প্রস্তাব বাইবার্স গ্রহণ করে। চুক্তির শর্ত শর্তনুযায়ী সারকোসিয়া থেকে মিসরে দাস রপ্তানি করে, যা দিয়ে বাইবার্স মামুলক সেনাবাহিনী ভারী করতে থাকেন।

বাগদাদ ধ্বংস, খলিফার মৃত্যুর ঘটনা, মুমসলিমদের উপর হত্যযজ্ঞ মুসলিম শাহেনশাহ হিসেবে বার্কে খানের রক্তে আগুন জ্বলতে থাকে। তার উপর উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পৈতৃক রাজ্য আজারবাইজান খানাক মঙ্গু খানের পরোক্ষ সহায়তায় হালাকু খান জবরদখল করে নেয়। বার্কে – হালুকুর দ্বন্দ্ব মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত সত্য। খাকান মঙ্গুকে বার্কে খান স্পষ্ট জানায়, ‘ হালাকু বাগদাদ ধ্বংস করেছে, মুসলিমদের এবং খলিফাকে হত্যা করেছে। আল্লাহর সাহার্য্যে আমি তার কাছ থেকে মুসলিমদের রক্তের বদলা নিয়ে ছাড়ব’। এধরণের চিঠি বার্কে খান ছাড়া আর কারো কাছে লেখার সাহস ছিল না।

বার্কে খান ধীরে এবং কৌশলে এগুতে থাকেন। বার্কে সিংহাসনে আরোহণের কিছুদিন পর মঙ্গু খান মারা যান। কুরুলতাইতে থেকে গেলেন হালাকু,কুবলাই, কাইদু খানসহ চেঙ্গিস বংশের সব প্রিন্স। বার্কে খান জানতেন হালাকুর ক্ষমতার উৎস ছিল তার ভাই মঙ্গু খান একং কুবলাই খান।  এবার বার্কে খান রাজনৈতিক চালের আশ্রয় নেন। তিনি খানদের বিরুদ্ধে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উদ্যোগ নিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় সিংহাসনের লড়াইয়ে কুবলাই খানের বিরুদ্ধে আরিক বোকেকে সমর্থন দেন এবং একটি অংশকে আরিক বোকেকের পক্ষে দাড় করাতে সমর্থ হোন। এর আগে বাগদাদ ধ্বংসের জন্য তিরস্কার করেন এবং আজারবাইজান ফেরত চান হালাকুর কাছে। হালাকু তা অস্বীকার করে।  পরবর্তিতে খাকান কুবলাই খানকে জানানো হলে কুবলাইও হালাকু পক্ষে থাকে। কিন্তু বার্কে খান কাওকে পরোয়া করতেন না। খানদের মধ্যে বার্কেই প্রথম, যে ঘোষণা দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে, সিংহাসনে আরোহণ করে শাহেনশাহ উপাধি ধারণ করে ও কেন্দ্রীয় কমান্ডকে অস্বীকার করে নিজেকে স্বাধীন খান হিসেবে ঘোষণা করে ছিল। উল্টো হালাকুকে চাপ বাড়িয়ে যেতে থাকে বার্কে খান। সেই ধারাবাহিকতা হালাকু খানকে পত্র লিখে জানায়, ‘ আজারবাইজান ফেরত দিয়ে ক্ষমা না চাইলে আমি তোমাকে সিংহাসন ছাড়া করবই’। বার্কে খানের জ্বালানো আগুনে জ্বলতে থাকে মোঙ্গল সিংহাসন।

বারকে খানের জীবনী

১২৬০ খ্রি. বাইবার্সের হাতে হালাকু খানের প্রধান সেনাপতি কিতবুগা নোয়ান আইন জালুত যুদ্ধে পুরো বাহিনী পরাজিত হয়। এরপর হিমসের যুদ্ধেও হালাকু খান  পরাজিত হয়। এতে শক্তি হ্রাস পায় হালাকুর। বার্কে খানের চাপে হালকু খান মুষড়ে পড়েন এবং ১৬৬২ খ্রি. আজারবাইজান হস্তান্তর করেন ; ঠিক এই এসময় বাইবার্স ও বার্কে খানের মাঝে মৈত্রচুক্তি হয়। যা হালাকু খানকে ভিতরে জ্বালাতে থাকে।

বার্কে খানকে আজারবাইজার প্রদান এবং বাইবাস- বার্কে খান মৈত্রিচুক্তির কারণে হালাকু অপমান বোধ করে। দুশমন বাইবার্সের নিকট দাস রপ্তানি বন্ধের অনুরোধ করলে বার্কে খান দাস রপ্তানি আরো বাড়িয়ে দেন।

বার্কে খান হালাকু খানকে ইসলামের ছায়াতলে আসার

আহবান জানান এবং মোংগলদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন।

তিনি আরো বলেন,

” মোঙ্গলরা নিজেদের তরবারিতেই মরবে। যদি আমরা এক থাকতাম তাহলে গোটা বিশ্ব আমাদের পদানত হতো।”

এখানে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অর্থ সকল মোঙ্গলদের ইসলাম গ্রহণ।

বার্কের আহ্বানে হালাকু খান চরম উওেজিত হয়ে  যান। বার্কে খানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় খাকান কুবলাই খানের নিকট আবেদন করেন। এদিকে  কুবলাই খানও  সম্মতি প্রদান করেন। বার্কে খানের ইসলাম গ্রহণ,

কেন্দ্রীয় কমান্ড থেকে বের হয়ে যাওয়া

ও সিরওর্দার স্বাধীনতাকে কুবলাই খান ভালো চোখে দেখননি। মোঙ্গল সাম্রাজ্য গুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় কমান্ডের সবচেয়ে বাধ্য অনুগত ছিল হালাকু খানের ইলখানাত সাম্রাজ্য।  আর সবচেয়ে অবাধ্য ছিল বার্কে খানের সিরওর্দা খানাত।  তাই কুবলাই খান বিশাল বাহিনী দিয়ে হালাকু খানকে সাহার্য্য করেন।

কেন্দ্রীয় কমান্ডে সমর্থনে হালাকু খান স্বরূপে হাজির হয়। এক লাখ চীনা মোঙ্গল ও ইলখানি পারস্য সৈন্য নিয়ে ককেশাস পর্বতমালার বুক দিয়ে ধেয়ে চলেন। এদিকে বার্কে খান হালাকুর বিশাল বাহিনীকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি আর হালাকুর দৌড় কতটুকু তা বার্কে খান ভালো জানতেন। বার্কে খানের কাছে এযুদ্ধের গুরুত্ব নামমাত্র। কারণ বার্কে খান বাগদাদ গণহত্যার জন্য হালাকুর উপরে একটা যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন। যার কারণে আজারবাইজান ইস্যু সামনে নিয়ে আসে, যাতে অন্যান্য মোঙ্গল খানাত অভ্যন্তরীণ ঝামেলা ভেবে চুপ করে বসে থাকে। বার্কে খানের পরিকল্পিত যুদ্ধে হালাকু খানকে নামতে হয়।

বারকে খানের জীবনী

বার্কে খান সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল হয় হালাকুকে শেষ করবে নাহয় এমন ভাবে বিষিয়ে দিবে যাতে শান্তিতে ঘুমাতে না পারে। হালাকুর বাহিনী যখন সিরওর্দা খানাতের নিকট তেরেখ নদীর তীরে উপস্থিত হয় তখন বার্কে খান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত। তাই নিজে না এসে ভাতিজা নোগাইকে চার টোমেন যোদ্ধা দিয়ে অভিযান চালাতে বললেন। তেরেখ নদীর তীরে ১৬৬৩ খ্রি. নোগাই খান ও হালাকু খান যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মোঙ্গলদের সাথে মোঙ্গলদের তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো ককেশাসে। যেখানে মোঙ্গলদের একপক্ষ হালাকু খানের সঙ্গে রণদেবতা সুদলের নামে যুদ্ধ করছিল। আরেকপক্ষ বার্কে খানের নেতৃত্বে আল্লাহু আকবার তাকবির ধ্বনি দিয়ে। এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হালাকু খান শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান।  নোগাই খান হালাকু খানকে ধাওয়া করে সাকারতেলোস জয় করে ইলখানি মোঙ্গলদের ইউরোপ থেকে বিতাড়িত করেন। বার্কে – বাইবার্সের কারণে হালাকুর যখন খুশি তখন মুসলিম সীমান্তে হামলার ইচ্ছে দমে যায়। বাইবার্সও মোঙ্গল হানানা থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে ক্রুসেডারদের দিকে মনযোগ দেন।

সম্মুখে হালাকু হেরে গেলেও মোঙ্গলদের গৃহযুদ্ধে জিতে আপন ভাই কুবলাইল খান। কুবলাই খান ক্ষমতা গ্রহণ করে হালাকুকে বাহিনী দিয়ে সাহার্য্য করে। এখন খাকান হালাকুর আপনভাই। অভ্যন্তরে বার্কে খানের নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। কিন্তু বার্কে খানের প্রতিশোধের নেশা যায়নি। তিনি আনাতোলিয়ার সেলজুক সুলতান কায় খসরুকে আর্থিক সামরিক সাহার্য্য দিয়ে মোঙ্গলদের বিরুদ্বে বিদ্রোহ সংঘঠিত করলেন।হালাকুর অনুরোধে বাইজেন্টাইন সম্রাট  সেলজুক সম্রাটকে বন্দি করলেন। এই খবর পেয়ে নোগাই খানকে বুলগেরিয়া ও থ্রেস আক্রমণের নির্দেশ দেন বার্কে খান। নোগাই খানের তীব্র আক্রমণে বাইজেন্টাইন সম্রাট দমে যায়। নোগাইয়ের সাথে সম্রাট মাইকেল নিজের মেয়েকে বিয়ে দেন। বার্কে খানকে উপহার পাঠিয়ে নিশ্চিত করলেন যে,  তিনি আগামীতে কোনো মুসলিম সুলতানের সঙ্গে ঝামেলায় জড়াবেন না। সেই সাথে বুলগেরিয়া থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব গোল্ডেন হোর্ডকে দেওয়া হবে।

বারবার পরাজয়ে হালাকু খান একদম ভেঙ্গে পড়ে। ১২৬৫ সালে হালাকু খান মৃত্যু বরণ করে।

বারকে খানের জীবনী

বাইবার্সের সাকিফ আরনুন বিজয়ের সময় খবর আসে সিরওর্দার প্রতাপশালী মুসলিম শাহানশাহ বার্কে খান ইন্তেকাল করছেন। বার্কের মৃত্যুশোকে বাইবার্স বায়তুল মাকিদস বিরতি নিয়ে তাঁর জন্য দোয়া মাহফিল ও কুরআন খতম করেন। ইয়াতিম -দুঃস্থদের মাঝে অর্থ খাদ্য বিতরণ করেন। উল্লেখ্য বার্কে খান পরবর্তি সিংসহাসনে আসীন হোন মেঙ্গু তিতুম খান। মেঙ্গু তিমুর অন্যান্য মোঙ্গলদের মতো ইসলামবিদ্বেষী ছিলেন না। বার্কের খানের পরিবারের মতো মুসলিমবান্ধব ছিলেন। এরপরেও বার্কে- বাইবার্স মৈত্রীচুক্তি বহাল থাকে।

বার্কে খান ও হালাকু খানের যুদ্ধ মোঙ্গলসাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগের সমাপ্তির দিকে ঠেলে দেয়। কুবলাই খানের বিরুদ্ধে আরিক বোকেকে সমর্থন দিয়ে চিরদিনের জন্য মোঙ্গল সাম্রাজ্যের রসদ জুগিয়ে দেন বার্কে খান। এই বিভক্তি আর থামেনি।

বার্কে খানের মৃত্যুরপরেও গোল্ডেন হোর্ডে ইসলাম ক্রমে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। সেইসঙ্গে চাগতাই খানাক এবং ইলখানতেও ইসলামের আলো ছড়িয়ে যেতে থাকে।  মোঙ্গলদের ভিতর ইসলাম প্রচারে ভূমিকা রেখেছিল মুসলিম মেয়েরা। যাদের মোঙ্গলরা দামী হিসেবে ধরে এনেছিল। মুসলিম মেয়েদের উন্নত স্বভাব ও আচার আচরণে অধিকারী মেয়েদের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করে। মূলত এই স্ত্রীরা ভালোবাসা দিয়ে ভেতর থেকে মোঙ্গলদের সাম্রাজ্যগুলো জয় করে নিতে শুরু করে, যার মোকাবেলা তলোয়ার দ্বারা সম্ভব হয়নি।

বার্কে খানের মা সুলতানা খাতুন ছিলেন একজন মুসলিম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top