বিশ্ববিদ্যালয় যেন বেশ্যালয়ে পরিণত না হয় - ইয়াসীন আরাফাত

বিশ্ববিদ্যালয় যেন বেশ্যালয়ে পরিণত না হয় – ইয়াসীন আরাফাত

বিশ্ববিদ্যালয় যেন বেশ্যালয়ে পরিণত না হয়

দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে বছরে সরকারের ব্যয় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯০২ টাকা প্রায়। আর এই টাকা গুলো কোথা থেকে আসে জানেন? এই ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯০২ টাকা কিন্তু সরকার দিচ্ছে না,  এগুলো আসে আপনার আমার, আমাদের বাবাদের বা আমারদের কষ্টে অর্জিত টাকা থেকে এমনকি টিসিবির ট্রাকের পিছনে ঝুলন্ত ঐ অসহায় নারীদের টাকাও সমানভাবে আছে এখানে।

আপনাদের ভাষায় কুলি, মজুর, কৃষক, রিক্সাচালক যাদের আপনারা ক্ষ্যাত বলেন তাদের টাকায় পড়াশুনা করে যাত্রা পালার মতো করে নর্তকী নাচিয়ে কনসার্ট করতে আপনাদের লজ্জা করে না? যাদের টাকায় আপনারা বা আমরা পড়াশুনা করি তারা খাবারের অভাবে যখন টিসিবির ট্রাকের পিছনে অসহায়ের মতো ঝুলে তখন আপনারা কেউ কেউ টিটকারি মেরে বলেন ওহ! আমাদের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে ! আর ওরা খাবারের জন্য কি করছে বা ফেইসবুকে একটা ট্রল স্ট্যাটাস দিয়ে বসে থাকেন । অন্যদিকে ঐ অসহায় লোকগুলো ধস্তাধস্তিতে যদি একটু কম টাকার আশায় সরকারি দ্রব্যাদি কিনতে না পারে তাহলে হয়ত তাদের চুলায় আগুন জ্বলবে না।

সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৪২তম ব্যাচের বিদায়ী অনুষ্ঠানে আয়োজন করা হয় যার অন্য নাম ‘র‌্যাগ ডে’। এই র‌্যাগ ডের কয়েকটি ভিডিও নিশ্চয় আপনারাও দেখেছেন! যেটা হয়ত কেউ কেউ উপভোগও করেছেন কিন্তু একটা জিনিস ভেবেছেন? এই বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের নৈতিকতার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ যেখানে আমরা সামাজিক বা সুস্থ্য সংস্কৃতির চর্চা করবো সেখানে যদি ওয়েস্টার্ন পোশাকে হিন্দি গানের সাথে উদ্দাম নৃত্যের আয়োজন করা হয় তো সেখান থেকে আমরা নীতি নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শেখার পরিবর্তে অনৈতিকতা এবং বেহায়াপনাই বেশি শিখবো।

গতকালকে আরেকটা খবর দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রশাসনিক কর্মকর্তা নীহার কান্তি বিশ্বাস নিয়মিত অফিস রুমে উচ্চশব্দে হিন্দি গান না শুনে নাকি অফিস করতে পারেন না। এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সূত্রে জানা যায় সে গান শুনা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অফিসে নিয়মিত হিন্দি সিনেমা দেখেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। 

পরিশেষে বলি, যেই কৃষক, মজুর, শ্রমিকদের এবং প্রত্যন্ত অবহেলিত মানুষদের টাকায় শিক্ষকদের বেতন হয় যাদের টাকায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে তাদের টাকাটা কোন খাতে ব্যয় হবে, সেটা কি কোন গবেষনা বা দেশের সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের পথে ব্যয় হবে নাকি যাত্রাপালায় নর্তকী নাচিয়ে সেটা উপভোগ করে ব্যয় হবে সেই বিচারভার আপনাদের উপরেই!

যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় সংস্কৃতির নগরী সেখানে সুস্থ্য সংস্কৃতির চর্চা হোক এবং শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতির বিকাশ ঘটুক এখান থেকে এটাই কামনা করি।

লেখক: ইয়াসীন আরাফাত

ফেইসবুক:  www.facebook.com/staywitharafats

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top