কী এই স্টারলিংক – স্টারলিংক এর সুবিধা, যেভাবে কাজ করবে এটি
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন আর ইন্টারনেট স্পিডের জন্য রাগ ওঠে নি এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। আপনি হয়তো এমনটাও আশা করেছেন যে যদি আমার রুমের স্পিড আমেরিকার মতো কোনো উন্নত দেশের মতো উচ্চগতির হতো! এরকমটা মনে হলে এই লিখাটি আপনার জন্য। এটি আপনাকে জানাবে আপনার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে।
বিজ্ঞান এবং মহাকাশ নিয়ে আগ্রহী কিন্তু ইলন মাস্ক এর নাম শুনেননি এমন মানুষ থাকবে বলে মনে হয় না। এই ইলন মাস্কই আপনার ইন্টারনেট গতির দুর্দশা কমাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন। এটির নাম “স্টারলিংক” প্রজেক্ট! এর বদৌলতে আপনি নিউইয়র্কে থাকা মানুষের সমান স্পিড বাংলাদেশের জঙ্গলে বসেও পেতে পারেন।
কী এই স্টারলিংক?
এটি এমন এক প্রজেক্ট যেটি বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১২,০০০ এর মতো স্যাটেলাইট ব্যবহার করার কথা। (কোনো কোনো জায়গায় আরো বেশী লিখা)।
তবে এই স্যাটেলাইট গুলো লো-অরবিট স্যাটেলাইট। বর্তমানে অনেক কোম্পানি জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সেবা প্রদান করে।
জিও স্টেশনারী স্যাটেলাইট গুলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫,৮০০ কিলোমিটার উপরে স্থির থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। আর এই স্টারলিংকের লো-অরবিট স্যাটেলাইট গুলো মাত্র ৫০০-১,০০০ কিলোমিটার উপরে থাকবে।
স্টারলিংকের উদ্দেশ্য :
স্টারলিংকের উদ্দেশ্য মূলত গ্লোবাল কানেক্টিভিটি। একইসাথে হাই-স্পিড, লো-ল্যাটেন্সি, নেক্সট-লেভেল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিশ্চিত করাও এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এর ফলে স্টারলিঙ্ক সরাসরি প্রতিযোগিতা করবে বর্তমানের অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির সাথে।
এই প্রজেক্টের সুবিধা :
এটি পুরো পৃথিবীকে জালের মতো ঘিরে ফেলবে এবং এর জন্য আপনি যেকোনো জঙ্গলের ভিতর থেকেও উন্নত দেশের প্রায় সমান স্পিড পাবেন। এটি হাই-স্পিড এবং লো ল্যাটেন্সী সেবা দিবে। হাই-স্পিড মানে যে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেটা নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন। এই লো ল্যাটেন্সী কী? এবার জেনে নিই।
লো ল্যাটেন্সী হচ্ছে একটা ডিভাইস আরেকটা ডিভাইসের সাথে রেসপন্স দিতে কত সময় লাগে এর একটা পরিমাপ।
ধরুন আপনি আপনার এক বন্ধুর সাথে গুলাগুলির গেম খেলছেন। আপনার ইন্টারনেট স্পিড অনেক ফাস্ট সাথে ল্যাটেন্সীও বেশী। তো আপনি আপনার শত্রুকে দেখার সাথে সাথে গুলি করলেন কিন্তু আপনার গুলি করার নির্দেশটা সার্ভারে গিয়ে পৌঁছাতে কিছু সময় লাগবে। আর এই সময়টুকুর মাঝেই হয়তো আপনার শত্রু সরে গিয়ে আপনাকেই গুলি করে দিবে! এতে করে আপনি জেতা গেম হেরে যাবেন। এই বেশী ল্যাটেন্সীর জন্যই আপনি হেরে গেলেন! এজন্য ল্যাটেন্সী গুরুত্বপূর্ণ।
যেভাবে কাজ করবে এটি:
বর্তমানে জিও-স্টেশনারী স্যাটেলাইট ব্যবহার হয় যা অনেক দূরে থাকে। দূরত্বের জন্য সিগন্যাল যাওয়া-আসা করতে অপেক্ষাকৃত বেশী সময় লাগে। এর ফলে নেটওয়ার্ক স্পিড কমে এবং ল্যাটেন্সী বাড়ে। এই স্টারলিংক প্রজেক্টের স্যাটেলাইট কাছাকাছি থাকায় তাড়াতাড়ি সিগন্যাল যাবে ফলে নেটওয়ার্ক স্পিড বাড়বে এবং ল্যাটেন্সী কম থাকবে। আরেকটা ব্যাপার হলো, জিও স্টেশনারীতে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার হয়। এতে করে আলোর গতি অনেকটা কমে যায়। পক্ষান্তরে এই স্টারলিংকে ব্যবহার হবে লেজার লাইট এবং বায়ু মাধ্যম, ফলে গতি কমবে না জিও স্টেশনারীর মতো। এটিতে আলো তার পূর্ণ গতিতে চলতে পারার কারণে ডেটা আদান-প্রদানের স্পিডও বেশি হবে।
সীমাবদ্ধতা:
আকাশকে ঘিরে ফেলায় জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে সমস্যা হতে পারে। রেডিও সংকেত আদান প্রদানে সমস্যা হতে পারে। তবে ইলন মাস্কের স্পেস এক্স বলছে তারা এই বিষয় নিয়ে কাজ করছে।
যত তাড়াতাড়ি এটি বাস্তবায়িত হবে তত তাড়াতাড়ি আপনিও বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মতো সমান স্পিড পাবেন। বাংলাদেশে বসেও জাপানের রাজধানী টোকিও এর স্পিড পাবেন এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে স্টারলিঙ্ক:
মহাকাশ থেকে ইন্টারনেট সেবা সরবরাহের প্রতিষ্ঠান ইলন মাস্কের স্টারলিংক বাংলাদেশকে তার সেবার আওতায় আনতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে এন্টেনাযুক্ত রাউটারের প্রি-অর্ডার নেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালেই এখানে তারা সেবা চালু করতে পারবে বলে আশা করা যাচ্ছে। ৯৯ ডলার ডিপোজিট করে যে কেউ অর্ডার করতে পারবে। যেহেতু বাংলাদেশে অনুমোদনের কিছু বিষয় আছে, সে ক্ষেত্রে তারা যদি সেবা চালু করতে না পরে তবে স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে ডিপোজিটের পুরো অর্থই গ্রাহক ফেরত পাবেন।
লিখা: হুজায়ফা আহমদ