চট্টগ্রামে ইসলাম

চট্টগ্রামে ইসলাম আগমনের ইতিহাস – Islam in Chittagong

চট্টগ্রামে ইসলাম আগমনের ইতিহাস – Islam in Chittagong: চট্টগ্রামের বারো আউলিয়ার একজন অন্যতম ওয়ালী আল্লাহ, চট্টেশ্বরী গুড়িয়ে দেওয়া গাযী’এ ইসলাম, ফাতিহে চাটগাম পীর কদল খান গাযী رحمة الله عليه। ***

১৩৪০ খ্রীষ্টাব্দের কিছু আগে কিংবা পরে তাঁর ১১ জন সাথী আউলিয়া-আল্লাহ’কে নিয়ে তলোয়ারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম ইসলাম কায়েম করেন মহান এই ওয়ালী’এ কামিল। সায়্যিদুনা কদল খান গাযী رحمة الله عليه চট্টগ্রাম আক্রমণ করবেন জেনে সোনারগাঁওয়ের সুলতান ফখর উদ্দীন মুবারাক শাহ, হযরতের খিদমাতে তাঁর সালতানাতের সৈন্যবাহিনী পেশ করলেন।

তৎকালীন পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা চট্টগ্রাম ছিলো মায়ানমারের শক্তিশালী মগ শাসকদের অধীনে। প্রচলিত ছিলো এই শাসক গোষ্ঠী অপরাজেয়, অসভ্য এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুর। সহজে কেউ এখানে আক্রমণ করার সাহস করতো না।

পীর কদল খান গাযী, তাঁর সাথী এগারোজন আউলিয়া-আল্লাহ رحمهم الله এবং ফখর উদ্দীন মুবারাক শাহের সৈন্যবাহিনীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম আক্রমন করলেন। মুসলমান বাহিনী’র আক্রমণের জবাবে স্বাভাবিকভাবেই কুফফারও তাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে মুসলমানদের উপর পালটা হামলা চালালো। মুসলিম বাহিনী’র অনেক বীর মুজাহিদ এই সংঘর্ষে শাহাদাত সুধা পান করলেন। এবং বারো আউলিয়া’র পরাক্রমশালী সৈন্যবাহিনী’র চতুর্মুখী আক্রমণে কাফিরদের দল খুব বেশি সময় টিকে থাকতে পারলো না। মুসলমান বাহিনী’র নিরবিচ্ছিন্ন আক্রমণে চট্টগ্রামের কুফফার পাহাড়-সমতল, জলে-স্থলে বিক্ষিপ্ত হয়ে পালানো শুরু করে।

কুফফার যখন বুঝতে পারে তাদের মৃত্যু অনিবার্য, তখন মুসলমানের তলোয়ার থেকে বাঁচতে তাদের অনেকে উত্তাল সমুদ্রে ঝাপ দেয় এবং ডুবে মারা যায়। কেউ কেউ বাঁচার আশায় গাছে উঠে আশ্রয় নেয়, গাছের ডালে আড়াল হয়ে লুকানোর চেষ্টা করে। মুসলমান সৈন্য গাছ কেটে তাদের প্রত্যেককে জাহান্নামে পাঠায়। এবং আল্লাহ তাআলা’র অনুমতিক্রমে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে ইসলামের বিজয় হয়।

চট্টগ্রাম বিজয়ের পরে চট্টগ্রামের বিখ্যাত চট্টেশ্বরী’র মূর্তি গুড়িয়ে দেন বারো আউলিয়া’র একজন ওয়ালী আল্লাহ رحمة الله عليه। এবং এভাবে চট্টগ্রামে ইসলামের পতাকা সমুচ্চ করা হয়।

চট্টেশ্বরীকে চট্টগ্রামের মুশরিকীন, চট্টগ্রামের ঈশ্বরী তথা চট্টগ্রামের রক্ষাকারী ‘দেবী’ বিশ্বাস করতো। সেই মূর্তি ধ্বংসের মাধ্যমে তথাকথিত চট্টেশ্বরী’র চট্টগ্রাম থেকে এই অঞ্চল মদীনাতুল আউলিয়া তথা বারো আউলিয়া’র পুণ্যভূমি চট্টগ্রাম হিসাবে প্রসিদ্ধি পায়।

বারোজন আউলিয়া-আল্লাহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে কুফফারকে পরাস্ত করে সর্বপ্রথম চট্টগ্রামকে মুসলমানদের আয়ত্বাধীন করেন এবং সমগ্র চট্টগ্রামবাসীকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেন। সেই বারো আউলিয়া’র নামেই চট্টগ্রাম আজ প্রসিদ্ধ। এই বিজয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারাক শাহের সালতানাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম বিজয়ের এই ঘটনা মধ্যযুগের কবি মুহাম্মদ খান তাঁর মক্তুল হোসেন কাব্যগ্রন্থে এভাবে বর্ণনা করেন,

“এক মনে প্রণাম করম বারে বার

কদলখান গাজী পীর ত্রিভূবনের সার ।।

যাঁর রণে পড়িল অক্ষয় (অসংখ্য) রিপুদল

ভএ কেহ মজ্জি সমুদ্রের তল ।।

একসর মহিম হইল প্রাণহীন

রিপুজিনি চাটি গ্রাম কৈলা নিজাধীন ।।

বৃক্ষডালে বসিলেক কাফিরের গণ

সেই বৃক্ষ ছেদি সবে করিলা নিধন ।।

তান একাদশ মিত্র করম প্রণাম

পুস্তক বাড়এ হেতু না লেখিলু নাম।

তান এক মিত্রে বধিলেক চাটেশ্বরী।

মুসলমান কৈল সব চাটিগ্রাম পুরী ॥

তান একাদশ মিত্র জিনিয়া চাটিগ্রাম

মুসলমান কৈলা চাটিগ্রাম অনুপাম ।।

তাহান প্রেমের সখা অতি গুণবান

একাদশ মিত্র সঙ্গে কদলখান গাজী রঙ্গে

দুই পীর বাড়ি লই গেলা ।।

হাজী খলিলকে দেখি বদর আলম সুখী

অন্যে অন্যে বহুল সম্ভাষিলা ।।”

ডক্টর আবদুল করিম প্রমুখ ঐতিহাসিকের মতে, কদল খান গাযী ছিলেন বারো আউলিয়ার অন্যতম। কয়েক দশক আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পটিয়া থানা থেকে ওয়ালী-আবদাল সম্পর্কিত একটি পুরাতন আরবী হস্তলিপি সম্বলিত পান্ডুলিপি উদ্ধার করা হয়। তাতেও বার আউলিয়ার নামের মধ্যে কদল খান গাজীর নাম পাওয়া যায়। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে সায়্যিদুনা কদলখান গাজী رحمة الله عليه ছিলেন সুলতান ফখর উদ্দীন মুবারাক শাহের সেনাপতি। অন্যান্য ঐতিহাসিকের মতে, সায়্যিদুনা কদল খান গাজী رحمة الله عليه নিজেই তাঁর সাথীদের নিয়ে স্থানীয় শাসকদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং ফখর উদ্দীন মুবারক শাহ তাঁকে সাহায্য প্রদানের উদ্দেশ্যে সৈন্য প্রেরণ করেন।

চট্টগ্রামে ইসলাম আগমনের ইতিহাস – Islam in Chittagong

চট্টগ্রামে ইসলাম আগমনের ইতিহাস – Islam in Chittagong

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top