অজু ভঙ্গের কারন সমূহ এবং মাকরূহ সহ প্রশ্ন উত্তর

অজু ভঙ্গের কারন সমূহ এবং মাকরূহ সহ প্রশ্ন উত্তর

অজু ভঙ্গের কারন সমূহ এবং মাকরূহ সহ প্রশ্ন উত্তর ।। ওজু নামাজ পালনের জন্য ফরজ ইবাদত। ইতোপূর্বে ওজুর ফরজ, সুন্নাত, আহকাম ও তারতিব তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কি কারণে ওজু মাকরূহ হয় এবং ভঙ্গ হয়ে যায়, তা জানা অত্যন্ত জরুরি বিষয়। যা জাগো নিউজে তুলে ধরা হলো-

ওজু ভঙ্গের কারণসমূহ

যে সব কারণে ওজু ভঙ্গ হয় বা নষ্ট হয় তা হলো-

১. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।

২. দেহের কোনো অংশ থেকে রক্ত, পুঁজ বের হয়ে যদি পবিত্র হওয়ার বিধান প্রযোজ্য হয়। অর্থাৎ গড়িয়ে পড়ে।

৩. মুখ ভর্তি বমি অর্থাৎ বেশি পরিমাণে বমি হলে।

৪. নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে।

৫. ঘুমানো- চিৎ হয়ে; কাত হয়ে; হেলান দিয়ে কিংবা কোনো কিছুর সঙ্গে ঠেস দিয়ে ঘুমালে যা সরিয়ে ফেললে ঘুমন্ত ব্যক্তি পড়ে যাবে।

৬. অজ্ঞান হওয়ার পর; এমন অজ্ঞান যাতে বোধ শক্তি লোপ পায়।

৭. অপ্রকৃতিস্থতা। যা ঘুম বা নিদ্রার চেয়েও প্রবল।

৮. রুকু-সাজদা বিশিষ্ট নামাজে অট্ট হাসি; তবে জানাজা নামাজে, তিলাওয়াতে সিজদায় এবং নামাজের বাইরে হাসলে অযু নষ্ট হবে না।

৯. পিছনের রাস্তা দিয়ে অর্থাৎ পায়খানার রাস্তা দিয়ে কীট বের হলে পবিত্রতা অর্জন তথা অযু করতে হবে।

১০. ফোঁড়া বা ফোস্কার চামড়া তুলে ফেলার কারণে যদি পানি বা পুঁজ বের হয়ে  ফোঁড়া বা ফোস্কার মুখ অতিক্রম করে তাহলে পবিত্র নষ্ট হবে।

১১. পুরুষ ও মহিলার গুপ্তাঙ্গ কোনো অন্তরায় ব্যতিত একত্রিত হলে; বীর্যপাত হোক আর না হোক ওজু নষ্ট হবে।

ওজুর মাকরূহসমূহ

ক. প্রয়োজনের বেশি পানি ব্যয় করা।

খ. প্রয়োজনের চেয়ে কম পানি ব্যয় করা।

গ. মুখমণ্ডলে এমনভাবে পানি নিক্ষেপ করা যে, পানির ছিঁটা অন্যত্র পড়ে।

ঘ. ওজুর সময় অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলা।

ঙ. ওজুর সময় বিনা ওজরে অন্যের সাহায্য নেয়া।

চ. নতুন পানি নিয়ে তিনবার মোথা মাসেহ করা।

প্রশ্ন : অজু করে মসজিদে যাওয়ার সময় খারাপ ছবিযুক্ত পোস্টার চোখে পড়লে বা কোনো সচিত্র পত্রিকা দেখলে কি অজু ভেঙে যায়?

কোনো দৃশ্য বা ছবি দেখলে অজু ভঙ্গ হয় না। খারাপ ছবিযুক্ত পোস্টার বা সচিত্র পত্রিকা চোখে পড়লেই অজুু ভেঙে যায় না।

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।

উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

প্রশ্ন

আমার একজন খালা গত তিন বছর আগে ব্রেন স্ট্রোক করেনএরপর থেকে তিনি আর পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননিঅনেক কিছুই মনে রাখতে পারতেন নামাঝেমধ্যে আপনজনদেরকেও চিনতে তার বেগ পেতে হতনামাযের সময় হলে কেউ মনে করিয়ে দিলে অজু করে এসে নামাযে দাঁড়াতেনতবে কয় রাকাত পড়ছেন, সিজদা কয়টি করছেন মনে রাখতে পারতেন নাঅর্থাৎ শুদ্ধভাবে কখনও নামায পড়তে পারতেন না অবস্থায় তিন বছর যাওয়ার পর গত কিছুদিন আগে তিনি এন্তেকাল করেনজানতে চাচ্ছি, তার উক্ত দীর্ঘ সময়ের নামাযগুলোর হুকুম কী? নামাযগুলোর ফিদয়া দিতে হবে কি?

উত্তর

প্রশ্নের বিবরণ অনুযায়ী আপনার খালার ব্রেন স্ট্রোকের পর তিনি যেহেতু পূর্ণ জ্ঞান ফিরে পাননি বরং একেবারে অস্বাভাবিক ছিলেন তাই তার ঐ সময়ের নামাযের জন্য আপনাদের কিছুই দিতে হবে না। কারণ, এমন অবস্থায় নামায ফরয থাকে না।

-জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪২৩; রদ্দুল মুহতার ২/১০০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার

প্রশ্ন

একদিন আমার ছোট ভাই চাকু দিয়ে ফল কাটার সময় হাত কেটে ফেলেরক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়ার আগেই টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলেএভাবে দু তিনবার করার পর সেভলন লাগালে রক্ত বন্ধ হয়ে যায়জানার বিষয় হল, উক্ত অবস্থায় কি ওর অযু ভেঙেছে?

উত্তর

হাঁ, তার অযু ভেঙ্গে গেছে। কেননা গড়িয়ে পড়া পরিমাণ রক্ত বের হলেই অযু ভেঙ্গে যায়। টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলার কারণে গড়িয়ে না পড়লেও তার পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলেও অযু ভেঙ্গে যাবে।

-ফাতাওয়া খনিয়া ১/৩৬; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৩; রদ্দুল মুহতার ১/১৩৫

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার

প্রশ্ন

আমার এক পায়ে ব্যান্ডেজ অযু করার সময় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করি জানার বিষয় হল, ব্যান্ডেজের উপর মোজা পরলে কি তার উপর মাসাহ করা যাবে?

উত্তর

হাঁ, ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে এবং অন্য পা ধুয়ে চামড়া জাতীয় মোজা পরা হলে পরবর্তী অযুর সময় থেকে উক্ত মোজার উপর মাসাহ করা যাবে। মাসাহর নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে উভয় মোজা খুলে পুণরায় ব্যান্ডেজের উপর মাসাহ করে নিবে এবং অপর পা ধুয়ে নিবে।

-শরহুয যিয়াদাত ১/১৫৮; রদ্দুল মুহতার ১/২৮০; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৫৭; কিতাবুল আসল ১/৭৩; শরহুল মুনইয়াহ ১২৩

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার

প্রশ্ন

আমার সন্দেহের রোগ আছে অযু থেকে ফারেগ হওয়ার পর পরই মনে হয় যেন মাথা মাসাহ করিনি এই সন্দেহ হওয়ার কারণে পুনরায় মাথা মাসাহ করি তাছাড়া কোনোক্রমেই স্বস্তি পাই না আমি জানতে চাই, এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী এবং এই সন্দেহের রোগ দূর করার উপায় কী?

উত্তর

আপনার কর্তব্য, অযু করার সময় মনোযোগ সহকারে অযু করা। অতপর অযু শেষ হওয়ার পরে মাথা মাসাহ না করার ব্যাপারে যতই সন্দেহ হোক সেদিকে মোটেই ভ্রুক্ষেপ না করা এবং কখনো সন্দেহের ভিত্তিতে পুনরায় মাথা মাসাহও না করা। এই সন্দেহ নিশ্চয়ই শয়তানের পক্ষ থেকে ওয়াসওয়াসা। কিছুদিন এভাবে করলে ওয়াসওয়াসা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

-খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫০

উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার

আরও প্রশ্ন উত্তর: https://habibur.com/fatwa/topic.udu/

More News: http://nittosongbad.com/religion

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top