Nitto Songbad
ঢাকাFriday , 2 September 2022
  1. biography
  2. english
  3. nitto-arabic
  4. Uncategorized
  5. অন্যান্য
  6. আন্তর্জাতিক
  7. কৃষি
  8. খেলাধুলা
  9. জানা অজানা
  10. ধর্ম
  11. নিত্য জবস
  12. প্রযুক্তি
  13. বাংলাদেশ
  14. বিনোদন
  15. ব্যবসা বাণিজ্য

পুনরায় বিশ্বরাজনীতির লাইম-লাইটে সৌদি আরব – আমব্রিন এইচ অ্যানি

নিত্য ডেস্ক
September 2, 2022 5:34 am
Link Copied!

পুনরায় বিশ্বরাজনীতির লাইম-লাইটে সৌদিআরব

নিত্য ডেস্ক।। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সফরকে কেন্দ্র করে উপসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সৌদি আরব এই অঞ্চলের যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র । কিন্তু বাইডেনের ক্ষমতায় আসার পর দু দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়েন শুরু হয়।

বাইডেন সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন। পাশাপাশি তুরস্কের ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকান্ডের সাথে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত এবং তার নির্দেশে এই হত্যাকান্ড হয় বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়। এরপর বাইডেন সৌদি আরবকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এছাড়া ইয়েমেনের ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাদ দেওয়ার পর ক্ষুদ্ধ হয় সৌদি আরব। এর মাধ্যমে বাইডেন পরোক্ষভাবে ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছিলেন। ফলে দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।

কিন্তু সৌদি আরবকে উপেক্ষা করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থান অক্ষুণ্ণ রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি আরবের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়।

ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য সফরের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরায়েলে ও ফিলিস্তিন সফর শেষে এখন সৌদিআরবে অবস্থান করছেন। আশা করা হচ্ছে এ সফরের মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের সমস্যার সমাধান হবে এবং দ্বিপাক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হবে।

এদিকে বাইডেনের এই সফরকে কেন্দ্র করে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ওই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক নতুন করে ঝালাই করে নিয়েছেন। এজন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন সৌদিতে আসার আগেই প্রিন্স মোহাম্মদ জুনের শেষ দিকে মিশর জর্ডান ও তুরস্ক সফর করেছেন। এই তিন দেশ সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যপ্রাচ্য সফর এ অঞ্চলে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে মিশর ও জর্ডানের সাথে যুবরাজের আলোচনায় ইরান ইস্যু প্রাধান্য পায় বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

একই সাথে তাদের আলোচনায় বাইডেনের সফরের সময় ১৬ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দায় উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) বৈঠক নিয়েও আলোচনা হয়। এ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও উপসাগরীয় দেশগুলো ছাড়াও মিশর, জর্ডান ও ইরাকের নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।

এছাড়াও যুবরাজের সফরে দেশগুলোতে ইউক্রেন যুদ্ধ কি ধরনের প্রভাব ফেলছে তা আলোচনায় উঠে আসে। কেননা এই যুদ্ধের মাধ্যমে মিশর বড় ধরনের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর আগে ইউক্রেন বিশ্বের মোট খাদ্য চাহিদার এক- তৃতীয়াংশ সরবরাহ করত। আর এই খাদ্যশস্যের অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে রপ্তানি করত। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেনের খাদ্যরপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব দেশে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। খাদ্য পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ফলে লাখ লাখ মানুষ অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছে।

সৌদি যুবরাজের এ গুচ্ছ সফরের অন্যতম আরেকটি দিক হলো তুরস্ক সফর। তুরস্ক বর্তমানে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া তুরস্কের সাধারণ নির্বাচনও কাছে চলে এসেছে। আগামী বছর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরদোয়ান আবারও এ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

নির্বাচনে জয়লাভ করতে তাকে তার দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে বাইরের সমর্থন ছাড়া এটা করা তার পক্ষে একদম সম্ভব নয়। সৌদি আরব হতে পারে এরদোয়ানের জন্য সেই সহায়ক শক্তি।

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদিআরবের দূতাবাসে সৌদি নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাসুগি হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান খোলাখুলি আঙ্গুল তুলেছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দিকে। তারপর মুসলিম বিশ্বের এ দুই প্রভাবশালী দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। বছর খানেকের মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তলানিতে গিয়ে ঠেকে যে সৌদি আরব অনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

অন্যদিকে বহু দিন পর্যন্ত সুযোগ পেলেই সৌদি যুবরাজকে একহাত নিতে ছাড়েননি এরদোয়ান। দুই দেশের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে দুই নেতার মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে অনেক দিন। কিন্তু গত এপ্রিল মাসে হঠাৎ এরদোয়ানের সৌদি আরব সফর এবং জেদ্দায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে তার হ্যান্ডসেকের ছবি প্রকাশ হওয়ার পর সবাই বুঝতে শুরু করে যে হাওয়া বদলাতে শুরু করেছে। এরদোয়ানের বিশেষ আমন্ত্রণে সর্বশেষ যুবরাজ সালমানের তুরস্ক সফরের ফলে দুই দেশের সম্পর্ক আরো মজবুত হয়।

গত কয়েক মাসে দুই দেশের সম্পর্ক ব্যাপক উষ্ণ হতে শুরু করেছে। ব্যবসা ও বিমান চলাচল বিধি নিষেধ উঠে গেছে। সৌদি আরবে তুর্কি টিভি সিরিজের সম্প্রচার শুরু হয়েছে। দুই দেশের মিডিয়ায় পরস্পরের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চলছিল সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক মূল্য স্ফিতিতে তুরস্কের অর্থনীতি ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়েছে। ডলারের বিপরীতে লিরার দাম কমেছে। দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে।

লিরার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে খুব দ্রুতই সৌদি আরবের সাথে তুরস্কের মুদ্রা বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এরদোয়ান আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজের দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে সৌদি আরবের থেকে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের আশা করছেন।

এদিকে আংকারার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের বিনিময়ে সৌদি আরব তুরস্কের সাথে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি করার দিকে নজর দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সৌদি আরব তুরস্কের বহুর আলোচিত বারাক্তার ড্রোন কেনার ব্যাপারে আগ্রহী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাগার্নো -কারাবাখ, সিরিয়া, লিবিয়া ও সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের এ ড্রোনের কার্যকারিতা ব্যাপকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্যই সৌদি যুবরাজ তুরস্কের কাছ থেকে এ ড্রোন কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়েছেন।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের এই কূটনৈতিক তৎপরতা থেকে ধারণা করা হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এবারের সফরের মাধ্যমে এ অঞ্চলের ব্যাপারে হোয়াইট হাউজের নীতি পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে।

সৌদি আরব আমেরিকার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ১৯৪৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি বাদশা আব্দুল আজিজ এর সাথে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজে বৈঠক করেছিলেন। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সব মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা অনুসরণ করেছেন।

জো বাইডেনের ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবের সাথে থাকা দীর্ঘদিনের নীতি থেকে সরে আসেন। পাশাপাশি ২০১৫ সালে ইরানের সাথে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার প্রতি তিনি অধিক আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সৌদি আরবসহ এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশ ইরানের পরমাণু চুক্তিকে কেন্দ্র করে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এসব দেশ মনে করে ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হয়ে যায় তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

সৌদি আরব, ইসরায়েল সহ উপসাগরীয় দেশগুলো চায় আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক প্ল্যান্টগুলো বোমা দিয়ে উড়িয়ে নষ্ট করুক। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেন সে পথে হাঁটছেন না। তিনি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে সকলের সাথে সমাধান করতে চান। তার এই নীতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সৌদি আরব, ইসরাইল সহ আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো।

সাম্প্রতিককালে ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর পাশাপাশি শক্তিধর দেশগুলো যে আলোচনায় বসেছে তা এখনো কোন মতামতের বা কোনো ফলাফলে এসে পৌঁছায়নি। এতে ইরান একদিকে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ঠিক তেমনি অপরদিকে তারা ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণও করছে।

এতে হতাশ হয়ে বাইডেন এখন সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। তিনি এখন বুঝতে পেরেছেন সৌদি আরবের মতো দীর্ঘদিনের মিত্র কে পাশ কাটিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এছাড়া সৌদি আরবের তেল বিশ্বের প্রয়োজন। ফলে নিজেদের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থে সৌদি আরবের সাথে আমেরিকার এ সম্পর্ক উন্নয়ন সবসময়ই জরুরি। তাই বাইডেন তার পূর্বের অবস্থান থেকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে পুনরায় সৌদি আরব সফরে এসেছেন। আর এর মাধ্যমে সৌদি আরব পুনরায় বিশ্বরাজনীতির লাইম-লাইটে চলে এসেছে।