ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতির মুখে পাকিস্তান
ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতির মুখে গত ৭ই জুন এক ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের নিজস্ব মুদ্রার মান রেকর্ড পরিমানে হ্রাস পেয়ে ১৯৯.৩৮ রুপীতে নেমে আসে। যেখানে কিনা ১৯৪৭ সালে এক ডলারের বিপরীতে ৩.৩১ পাকিস্তানি রুপিতে লেনদেন করা হয়েছিল। তাছাড়া বর্তমানে পাকিস্তানের ভাণ্ডারে মাত্র ১০.১৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। তাও আবার সেই রিজার্ভ কিনা বৈদেশিক ঋনের উপর নির্ভর করে দাড়িয়ে আছে।
অথচ এদিকে দেশটির সরকার ঋন ভিক্ষা করে দেশ চালাতে বাধ্য হলেও থেমে নেই দেশটির সামরিক খাতে নির্বিচারে ব্যয় এবং বিদেশ থেকে অস্ত্র ক্রয়ের অশুভ প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে ২০১৬ সাল থেজে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের তালিকা দেখলে যে কেউ একেবারে চমকে যেতে পারে।
দেশের পাহাড় সমান সমস্যা এবং আর্থিক সংকট মাথায় নিয়ে পাকিস্তানের নতুন সরকার অতিরিক্ত ৮৩ বিলিয়ন রুপি বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জন্য। অবশ্য এটা পরিষ্কার যে, সেনাবাহিনীকে খুশি রেখে ক্ষমতা শক্তিশালী করতে চায় বর্তমান সরকার।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ১.৪৫৩ ট্রিলিয়ন রুপি বরাদ্দ রাখতে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১.৩৭ ট্রিলিয়ন রুপি। এটি কিন্তু আগের অর্থবছর অপেক্ষা ৬% বেশি। তবে পাকিস্তানের নিজস্ব মুদ্রা রুপীর মান ডলারের বিপরীতে অবিশ্বাস্যভাবে কমে যাওয়ায় এই সামরিক খাতে ব্যয়ের পরিমাণ ৭.২৯ বিলিয়ন ডলার হবে। যেখানে প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১৯৯.৩৮ রুপিতে লেনদেন করা হচ্ছে দেশটিতে।
ইউকীপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋন ও দায়ের স্থিতির পরিমাণ ১২৭.২ বিলিয়ন ডলার। অথচ বিপদজনক পর্যায়ে বৈদেশিক ঋনের দায়ে জর্জরিত হলেও সারা বিশ্ব থেকে অস্ত্র ক্রয়ের এক অশুভ উৎসবে মেতে উঠেছে দেশটি।
ভারতকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলায় পাকিস্তান ইতোমধ্যেই চীনের কাছ থেকে ৪টি অত্যাধুনিক টাইপ-৫৪/পি সিরিজের যুদ্ধজাহাজ, ৮টি ইউয়ান ক্লাস ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন এবং ২৫ থেকে ৩৬টি জে-১০সি সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। যার আনুমানিক আন্তর্জাতিক মূল্য হতে পারে প্রায় ১০-১২ বিলিয়ন ডলার। আর এই অর্থের একটি বড় অংশ পর্যায়ক্রমে চলে যাবে চীনের পেটে। তাছাড়া তুরস্কের সাথেও সাম্প্রতিক সময়ে বড় ধরণের অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে পাকিস্তান।
আর চীন পাকিস্তানের যতই পরীক্ষিত বন্ধু হোক না কেন, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে বড় ধরণের মুনাফা কিংবা স্বার্থ ছাড়া চীন এক ডলারও পাকিস্তানকে সহায়তা করবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
লেখা: সিরাজুর রহমান।