ইসরাইলের নিজস্ব উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে একটি ভাবনাঃ

ইসরাইলের নিজস্ব উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে একটি ভাবনা

ইসরাইলের নিজস্ব উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে একটি ভাবনাঃ

১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা হওয়ার ৩০ বছর আগেই ১৯১৮ সালে ইহুদিরা জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠা করে ‘দ্য হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেম’। বর্তমানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের দিক থেকে ইসরায়েলের এই প্রাচীন ‘দ্য হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেম’ রয়েছে একেবারে প্রথম সারিতে। অন্য দেশ থেকে ইসরায়েলকে যা আলাদা করা হয়েছে তা হলো এর উচ্চ শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র বা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ‘দ্য হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেম’ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ২৩ হাজার।

প্রযুক্তি ভিত্তিক গভীর গবেষণা এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিশ্বের যে কোন প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রবল প্রতিযোগীতা করার মতো যোগ্যতা রাখে ইসরাইলের এই শত বছরের পুরনো হিব্রু ইউনিভারসিটি অফ জেরুজালেম। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন, সারা ইসরাইল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শতাধিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব মানের উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্র বা বিশ্ববিদ্যালয়।

সেন্টার ফর ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং এ ইসরাইলের ইউনিভার্সিটি রয়েছে ৯টি এবং হিব্রু ইউনিভার্সিটি অব জেরুজালেম রয়েছে ৬৪ তম স্থানে। আবার দেশটির তেল আবিব ইউনিভার্সিটি রয়েছে ১৫২ তম স্থানে। যেখানে কিনা তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৬৬.৪ স্কোর নিয়ে ১৮১৬ তম স্থানে রয়েছে।

আসলে বিগত চার দশক ধরে বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রযুক্তি সমৃদ্ধ বা টেক জায়ান্ট দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে মধ্যপ্রাচ্যের মিনি সুপার পাওয়ার খ্যাত দেশ ইসরায়েল। ১৯৪৮ সাল থেকে চলমান যুদ্ধ বিগ্রহের মাঝে বেড়ে ওঠা এই দেশটি অত্যন্ত সফলতার সাথে যুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে এক অতি দক্ষ প্রযুক্তি নির্ভর দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে নিজেকে উপস্থাপন করেছে। আর ইসরাইলের এহেন আশ্চর্যজনক প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে দেশটির সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণামুলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

বর্তমানে ইসরাইলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এখন শুধুমাত্র পড়ালেখার স্থান বললে একেবারেই ভূল হয়ে যাবে। আসলে তাদের উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অত্যন্ত সফল ও পেশাদার উদ্যোক্তা তৈরির কারখানা বললেও ভূল কিছু হবে না। বর্তমানে হাজারো যুদ্ধ বিগ্রহের মধ্যেও অবিশ্বাস্য ভাবে সারা ইসরায়েল জুড়ে প্রায় ৪ হাজারের অধিক প্রযুক্তি নির্ভর কলকারখানা বা গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও গবেষণায় বিশ্বের প্রথম সারির অধিকাংশ দেশকে নিশ্চিতভাবে পেছনে ফেলে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে ইসরাইল।

ইসরাইলের মোটোরোলা কোম্পানির তৈরি মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে এবং ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স। আর বিশ্বের ড্রোন (ইউএভি) প্রযুক্তির আঁতুড়ঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয় ইসরায়েলকে। তারা কিন্তু সেই ১৯৯৪ সালে আকাশে সর্বপ্রথম নজরদারি ড্রোন(ইউএভি) পপরীক্ষামুলক সফল উড্ডয়ন করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে।

মাত্র ৮,০১৯ বর্গ মাইলের দেশ ইসরাইলের নিজস্ব সামরিক ও প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে নতুন নতুন যুদ্ধাস্ত্র বা সামরিক সাজ সরঞ্জাম তৈরি ও অবিশ্বাস্য উদ্ভাবনী সক্ষমতাকে এখনো পর্যন্ত সমিহ করে চলে বিশ্বের প্রথম সারির সুপার পাওয়ার দেশগুলো। একেবারে ছোট্ট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসরাইল তার নিজস্ব প্রযুক্তির মারকাভা মেইন ব্যাটল ট্যাংক ট্যাংক এবং বিশ্ব মানের আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, কমব্যাট ড্রোন তৈরি করে। যেখান থেকে কিনা আবার প্রযুক্তি শেয়ার করে নিজে ব্যবহার করে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার আমেরিকা।

বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে চীন হয়তো উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে থাকতে পারে, কিন্তু নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, গবেষণা, আবিষ্কার আর তা বাস্তবে তৈরি করার দিক থেকে সবার উপরে উঠে এসেছে ইসরায়েল।

গুগলের নতুন প্রযুক্তিগুলোর অনেকগুলোই কিন্তু ডেভেলপ বা ডিজাইন করেছে এই ইসরায়েলি প্রযুক্তিবিদেরা। ইনটেল, বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রসেসর তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান, মাইক্রোচিপ নিয়ে গবেষণার জন্যও ইসরায়েলের গবেষকদের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকতে হয়। ইসরায়েলের ইনটেল কারখানায় কাজ করে ১১ হাজারেরও বেশি প্রযুক্তিবিদ এবং দক্ষ আইটি কর্মী। যেটি কিনা এখন দেশটির অন্যতম বড় প্রযুক্তি নির্ভর কারখানা। বিল গেটসের মাইক্রোসফটকেও ধরা হয় একটি আধা-ইসরায়েলি কোম্পানি হিসেবে। অর্থাৎ আপনার কম্পিউটারে চালিত উইন্ডোজ সফটওয়্যারটি ডেভেলপ করতেও হয়ত অবদান রয়েছে কোনো ইসরায়েলি প্রযুক্তিবিদের।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, ইসরায়েলের আয়ের অন্যতম বড় একটি অংশই আসে এই প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প খাত থেকে। আইবিএম এবং ফেসবুকের মতো বড় বড় কোম্পানিগুলোর ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ সেক্টরে কাজ করা এবং প্রযুক্তি রপ্তানির ফলে যে অর্থ আয় হয়, তা কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ইসরায়েলের মোট জিডিপির প্রায় ১২.৫% কেও ছাড়িয়ে গেছে।

মাত্র ৯৩.৪৮ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত ইসরাইলের নমিনাল জিডিপির আকার প্রায় ৪১০ বিলিয়ন ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪৪,৪০০ ডলার। যদিও ১৯৪৮ সাল হতে জন্মের শুরু থেকেই ইসরাইলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিদ্যামান রয়েছে। বর্তমানে আমেরিকা প্রতি বছর ইসরাইলকে ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে এবং তার পাশাপাশি আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের বেশকিছু দেশ থেকে আরো কমপক্ষে ৩-৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অনুদান হিসেবে পেয়ে থাকে দেশটি।

লেখক: Sherazur Rahman

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top