সেনেগাল দেশ এর ইতিহাস- সাদিও মানের দেশ সেনেগাল

সেনেগাল দেশ এর ইতিহাস- সাদিও মানের দেশ সেনেগাল

সেনেগাল দেশ এর ইতিহাস- সাদিও মানের দেশ সেনেগাল

সেনেগাল প্রজাতন্ত্র পশ্চিম আফ্রিকার একটি রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম ডাকার। সেনেগাল-এর নামকরণ সেনেগাল নদী থেকে। সেনেগাল নদী দেশটির পূর্ব ও উত্তর সীমান্ত নির্দেশ করে। সেনেগালের পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর; উত্তরে মৌরিতানিয়া, পূর্বে মালি এবং দক্ষিণে গিনি ও গিনি-বিসাউ। এছাড়া সেনেগাল প্রায় গাম্বিয়াকে ঘিরে রয়েছে, যা এমন একটি দেশ যেটি গাম্বিয়া নদীর তীরে একটি সংকীর্ণ জমি দখল করে আছ এবং সেনেগালের দক্ষিণাঞ্চলীয় ক্যাসামান্সকে দেশের বাকি অংশ থেকে আলাদা করেছে। সেনেগাল কেপ ভার্দের সাথে একটি সামুদ্রিক সীমানাও ভাগ করে নিয়েছে।

সেনেগাল নামটি শুনলে প্রথমেই মনে আসে বিখ্যাত সুরকার ও গীতিকার একনের কথা। যার সুরের মাধুরী সারা বিশ্বের কাছে সুপরিচিত। এরপর দেশটির রেসলিং এবং ফুটবল খেলার চিত্র ফুটে ওঠে। তবে এই জানার বাইরেও রয়েছে সেনেগালের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস।

আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তের একটি দেশ সেনেগাল প্রজাতন্ত্র। দেশটির রাজধানীর নাম ডাকার। এর পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে মৌরিতানিয়া, পূর্বে মালি এবং দক্ষিণে গিনি ও গিনি-বিসাও। এছাড়াও গাম্বিয়া রাষ্ট্রের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ সীমানা সেনেগাল দ্বারা বেষ্টিত।

সেনেগালের আয়তন এক লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার সাতশ বাইশ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ৮৬তম দেশ এটি। তবে শাষণ ব্যবস্থার সুবিধার্থে বর্তমানে দেশটি ১৪টি অঞ্চলে বিভক্ত। সেনেগালের অফিশিয়াল ভাষা ফ্রেন্স হলেও স্থানীয় অনেক গুলো ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা হচ্ছে ওলফ। সেনেগালের মুদ্রার নাম কমুটেট ফাইনেনসিয়ার আফ্রিকানি ফ্রান্সি, সংক্ষেপে যা জফ হিসেবে প্রচলিত।

২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, সেনেগালের জনসংখ্যা এক কোটি সাতান্ন লাখের কিছু বেশি। এদের শতকরা ৯৪ ভাগ মুসলমান, ৫ ভাগ খ্রিষ্টান এবং অবশিষ্ট এক ভাগ অন্যান্য ধর্মের। দেশটির অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে এবং জনসংখ্যার অধিকাংশ ওলফ নামের জনগোষ্ঠীর অর্ন্তভূক্ত।

এক মতবাদ অনুযায়ী জানা যায়, ১৫ কিংবা ১৬ শতকের দিকে পর্তুগিজরা সেনেগালে আসে। স্বাভাবিক ভাবেই তখন দেশটির নাম তাঁদের জানা ছিল না। তখন স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে নাম জানতে চাইলে তাঁরা বলে ‘সুনু গাল’। কিন্তু পর্তুগিজরা ওই শব্দের কোনও অর্থ বুঝতে না পেরে নাম দিয়ে ফেলে ‘সেনেগাল’। তবে সাধারণ মানুষের মতে সেনেগাল নদীর ওপর ভিত্তি করে দেশটির নাম রাখা হয়েছে ‘সেনেগাল’। এই সেনেগাল নদী দেশটির পূর্ব ও উত্তর সীমান্ত নির্দেশ করে।

পর্তুগিজরা আসার আগে সেনেগাল বেশ কয়েকটি সম্রাজ্য ও রাজ্যের অধীনে ছিল। ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে দেশটি পূর্ণ স্বাধীনতা পায়। তখন স্বাধীন দেশের প্রধান রাষ্ট্রপতি হন লিওপোল্ড ফেডার সিংহল, যিনি একজন কবি এবং দার্শনিক ছিলেন। তিনি নিজেই সেনেগালের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেন।

সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করা এখানকার মানুষের অন্যতম প্রধান পেশা। এরা নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া দেশটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আম উৎপাদন হয়। চাষ হয় প্রচুর ক্যাসোনাট। কৃষির জন্য প্রচুর জমি পড়ে থাকলেও কৃষিকাজের জন্য তেমন আগ্রহ নেই তাঁদের। বিভিন্ন দিক দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সেনেগালের রয়েছে যথেষ্ট মিল। এর মধ্যে ধর্ম, খাদ্যাভাসে মিল হল অন্যতম। তাছাড়া সেনেগালের আবহাওয়া অনেকটা সহনীয়।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে সেনেগাল। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেনেগাল নদীর ব-দ্বীপ, ছোট বড় কিছু উদ্যান, দেশটির রাজধানী ডাকার এবং সেন্ট লুইসের মত কিছু ঔপনেবিশিক স্থান। এছাড়া দেশটির একটি লেকের নাম রেতবা। আমরা নীল পানির জলাশয়ের কথা শুনেছি, হয়তো দেখেছিও। কিন্তু গোলাপি পানির জলাশয়ের কথা শুনেছি কি? এই রেতবা লেকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পানির রঙ গোলাপি থাকে। তাছাড়া লেকটির এক পাশে পাহাড়, আরেক পাশে আটলান্টিক মহাসাগর। মাঝখানে সরু একটি করিডোর। মাথার উপরে নীল আকাশ, নিচে গোলাপি হ্রদ- সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত দৃশ্য। এ দৃশ্য টেনে আনে দেশ বিদেশের পর্যটক।

এখানকার প্রায় সব মানুষই আচার আচরণে অনেক শান্ত শিষ্ট। সবাই সবার সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করে থাকে। তবে এখানে এখনও অনেক মানুষ কবিরাজী চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল। এটা তাদের ট্রাডিশনাল ব্যবস্থা। এর পেছনে কারণও আছে আর তা হল সেনেগালে চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। সেনেগালের সরকারী পর্যায় থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। গ্রাম থেকে শহর প্রত্যেক বাড়িতে সরকারী ভাবে পানি বিতরণের ব্যবস্থা আছে। তবে অর্থের বিনিময়ে পানি কিনে নিতে হয়।

সেনেগালের শহরগুলো অনেক সুন্দর। শহরগুলো বিভিন্ন অংশে বিভক্ত। যেহেতু আধুনিক অট্টালিকা এখনও সেনেগাল সেভাবে গড়ে উঠেনি। তাই রাতের সেনেগাল অপরুপ জোসনার খেলায় মেতে ওঠে। সেনেগালের রাস্তাঘাট পরিষ্কার এবং প্রসারিত। তাছাড়া সেনেগালে দুই শ্রেনীর মানুষ দেখা যায়। উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত। তাঁদের জীবনে যা আয় তাই ব্যয়, এভাবেই জীবন কেটে যায়। তাঁদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি দেখা যায় না।

রেসলিং এবং ফুটবল খেলার জন্য সারা বিশ্বে সেনেগাল যথেষ্ট পরিচিত। তাছাড়া বাষ্কেট বল খেলায় আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে সফলতম দেশ হিসেবে বিবেচিত। আটলান্টিক মহাসাগরের পাশ্ববর্তী দেশ হওয়ায় এখানে পাওয়া যায় স্বুস্বাদু সব মাছ। এছাড়াও দেশটির অতিথী আপ্যায়নের জন্য রয়েছে বিশেষ সুনাম।

সামরিক

বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ক্যাসামান্স দ্বন্দ্বে ল্যান্ড মাইন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

সেনেগালের সশস্ত্র বাহিনী সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী এবং জেন্ডারমেরিতে প্রায় ১৭,০০০ জন কর্মী নিয়ে গঠিত। ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছুটা হলেও জার্মানির কাছ থেকে সেনেগালীয় সেনাবাহিনী এর অধিকাংশ প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম এবং সহায়তা পায়।

রাজনৈতিক বিষয়ে সামরিক অ-হস্তক্ষেপ স্বাধীনতার পর থেকে সেনেগালের স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে। সেনেগাল অনেক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। অতি সম্প্রতি, ২০০০ সালে সেনেগাল মনুক, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের জন্য গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে একটি ব্যাটালিয়ন পাঠিয়েছিল এবং জাতিসংঘের আরেকটি শান্তিরক্ষা মিশন উনামসিলের জন্য সিয়েরা লিওনে একটি মার্কিন-প্রশিক্ষিত ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করতে সম্মত হয়েছিল।

২০১৫ সালে, সেনেগাল শিয়া হুথিদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক হস্তক্ষেপে অংশ নিয়েছিল।

নারী

সেনেগাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কনভেনশন এবং সেইসাথে অতিরিক্ত প্রোটোকল অনুমোদন করেছে। সেনেগাল আফ্রিকান চার্টার অফ হিউম্যান অ্যান্ড পিপলস রাইটসেরও অন্যতম স্বাক্ষরকারী, যা ২০০৩ সালে আফ্রিকান ইউনিয়ন সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল। তবে নারীবাদীরা প্রটোকল, কনভেনশন এবং নারীর অধিকার রক্ষার উপায় হিসাবে স্বাক্ষরিত অন্যান্য পাঠ্য প্রয়োগে সরকারের পদক্ষেপের অভাবের সমালোচনা করেছেন।

জাতিগোষ্ঠী

সেনেগালে বিভিন্ন ধরনের জাতিগোষ্ঠী রয়েছে এবং অধিকাংশ পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলির মতো এখানেও বেশ কয়েকটি ভাষা ব্যাপকভাবে বলা হয়। ওলোফ হল সেনেগালের বৃহত্তম একক জাতিগোষ্ঠী (৪৩%); ফুলা এবং টোকোলিউর (হালপুলার’এন নামেও পরিচিত, আক্ষরিক অর্থে “পুলার-ভাষী”) (২৪%) হল দ্বিতীয় বৃহত্তম গোষ্ঠী, এরপরে সেরে (১৪.৭%),[৭১] তারপরে রয়েছে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী যেমন জোলা (৪%), মান্ডিঙ্কা (৩%), মৌরস বা (নারকাজরস), সোনিঙ্কে, বাসারি এবং অনেকগুলি ছোট সম্প্রদায় (৯%)। (এছাড়াও বেডিক জাতিগোষ্ঠী দেখুন।)

সেনেগালে প্রায় ৫০,০০০ ইউরোপীয় (অধিকাংশ ফরাসি) বসবাস করে। লেবানীয় মৌরিতানীয় এবং মরক্কোর[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] কম সংখ্যক অভিবাসীরা সেনেগালে বসবাস করেন, প্রধানত শহরগুলিতে এবং কিছু অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি যারা এমবোরের আশেপাশের রিসর্ট শহরে বসবাস করেন।লেবাননের অধিকাংশই বাণিজ্যে কাজ করে। অধিকাংশ লেবানীয়দের উৎপত্তি লেবাননের টায়ার শহর থেকে, যা “লিটল ওয়েস্ট আফ্রিকা” নামে পরিচিত এবং একটি প্রধান বিহারভূমি রয়েছে যাকে “অ্যাভিনিউ ডু সেনেগাল” বলা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সেনেগালের স্বাধীনতার মধ্যবর্তী দশকে দেশটি ফ্রান্স থেকে অভিবাসনের একটি ঢেউ প্রত্যক্ষ করেছিল; এই ফরাসি মানুষদের অধিকাংশই ডাকার বা অন্যান্য প্রধান শহুরে কেন্দ্রগুলিতে বাড়ি কিনেছিল। এছাড়াও প্রাথমিকভাবে শহুরে বিন্যাসে অবস্থিত ছোট ভিয়েতনামী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান চীনা অভিবাসী ব্যবসায়ীদের প্রত্যেকের সংখ্যা সম্ভবত কয়েকশ লোক হবে। সেনেগালে প্রাথমিকভাবে দেশটির উত্তরে কয়েক হাজার মৌরিতানীয় শরণার্থী রয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শরণার্থী ও অভিবাসী কমিটি দ্বারা প্রকাশিত বিশ্ব শরণার্থী জরিপ ২০০৮ অনুযায়ী, ২০০৭ সালে সেনেগালে শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩,৮০০ জন। এই জনসংখ্যার অধিকাংশই (২০,২০০) মৌরিতানিয়ার। শরণার্থীরা ন’দিউম, ডুদেল এবং সেনেগাল নদী উপত্যকা বরাবর ছোট বসতিতে বসবাস করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top