রক্ত চন্দন কাঠ

পুষ্পা মুভি তে ব্যবহৃত রক্ত চন্দন কাঠ এর অজানা রহস্য- Pushpa Movie

পুষ্পা মুভি তে ব্যবহৃত রক্ত চন্দন কাঠ এর অজানা রহস্য- Pushpa: The Rise : “পুষ্পা”(Pushpa) মুভিতে ব্যবহৃত হওয়া রক্ত চন্দনের কাঠ scientific name  Pterocarpus Santalinus  নিয়েই কিছু কথা তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

এই ফিল্ম রক্ত চন্দনের কাঠ (Blood Sandalwood) নিয়ে তৈরি। রক্ত চন্দন অন্ধ্রপ্রদেশের  গভীর জঙ্গলে পাওয়া যায়। এক ধরনের বিশেষ চন্দনের গাছ কেটে তার ভিতর থেকে এই কাঠ আনতে হয়। যা খুবই কষ্টসাধ্য। এই কাঠ কোটি-কোটি টাকাতে বিক্রি হয়। বৈজ্ঞানিক ভাষায় এই লাল চন্দনকে “#Pterocarpus_Santalinus” বলা হয়। এর ব্যবহার সাজার জিনিস ও ওয়াইনে করা হয়। অন্তত ওয়াইন ইন্ডাস্ট্রিতে এই রক্ত চন্দন কাঠের ডিমান্ড অনেক। অন্তঃরাষ্ট্রীয় বাজারে 3000 প্রতি কিলো রেটে এর দর শুরু হয়।

এই ফিল্মে (Pushpa Movie) দেখানো হয়েছে আল্লু আর্জুন (Allu Arjun) ওরফে পুষ্পা অনেক চেষ্টা করে এই প্রকারের চন্দন কাঠ ইমপোর্ট করতেন। এই কাজে অনেক বড় বড় লোকেরা যুক্ত ছিলেন। চন্দন কাঠ দুই প্রকারের হয়- লাল ও সাদা। দুটোরই দাম অনেক। আপনাদের জানিয়ে রাখি, অন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ ‘লাল চন্দন’কে বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদের মধ্যে ফেলেছেন। ২০১৮ সালে তারা জানান এই গাছ ভারতের পূর্ব তটবর্ত্তীয় স্থানে পাওয়া যায়। কিন্তু এর পরিমাণ পৃথিবীর সমগ্র উদ্ভিদ গোষ্ঠীর ৫ শতাংশেরও কম।

এই রক্ত চন্দন কাঠকে ভারতের ‘লাল সোনা’ও বলা হয়ে থাকে। ইতিহাস বলছে যে ১৪ দশক ও ১৭ দশকে এই কাঠের ফার্নিচার বানানো হত। এই ফার্নিচার বহুমূল্য হওয়ায় রাজবংশের লোকেরাই মূলত এই ফার্নিচার ব্যবহার করতেন।।

কেন এত চাহিদা রক্তচন্দন কাঠের?

আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। হজম, ডায়েরিয়া-সহ বেশি কিছু রোগের চিকিৎসায় এই কাঠ কাজে লাগে। রক্ত শুদ্ধিকরণের গুণও রয়েছে এই কাঠের। ওষধি গুণ ছাড়াও মদ তৈরিতে এই কাঠের বিপুল চাহিদা। এ ছাড়া পূজা-আর্চা, প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতেও এই কাঠ ব্যবহার করা হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজার টাকা থেকে এই কাঠ বিক্রি শুরু হয়। ভারতে এই গাছ কাটা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তার পরেও পাচার হয়। পাচার রোখার জন্য ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ও গঠন করা হয়েছে। ২০২১ সালে ৫০৮ কোটি টাকার রক্তচন্দন বাজেয়াপ্ত করেছে এই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। গ্রেফতার হয়েছে ৩৪২ জন পাচারকারী।

রক্তচন্দন কাঠের ১৫টি বহুবিধ ব্যবহার ও ঔষধি গুণাগুণ

১. প্রবল জ্বরের দহে:  অকৃত্রিম রক্তচন্দনের গুড়া বা চেলি ১০ থেকে ১২ গ্রাম এক পোয়া আন্দাজ গরম জলে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে সেই জল অল্প মাত্রায় সমস্ত দিন খেলে দাহ ভাল হয়; গুঁড়ার অভাবে রক্তচন্দন ঘষে গরম জলে গুলে নিলেও হবে।

২. রক্ত প্রবাহের জ্বালায়:  উপরিউক্ত পদ্ধতিতে রক্তচন্দনের জল তৈরী করে ২ থেকে ৩ বার খেলে জ্বালা কমে যায় ও রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

৩. রক্তপিত্তে:  যেখানে ঝলকে ঝলকে রক্ত উঠছে, তার সঙ্গে শরীরের জ্বালাও আছে এ ক্ষেত্রেও ঐ পদ্ধতিতে জল তৈরী করে খেলে গায়ের জ্বালা ও রক্তবমন নিশ্চিত প্রশমিত হবে। বৃদ্ধ বৈদ্যেরা এরই সঙ্গে ৪ থেকে ৫ গ্রাম পাতা সমেত শালপানি (Desmodium gangeticum) গাছ থেতো করে ভিজিয়ে খেতে বলেন।

৪. অনিয়মিত রক্তস্রাবে:  যাঁদের ঋতুধর্ম অনিয়মিত হয় সে ক্ষেত্রে এই রক্তচন্দন উপরিউক্ত মাত্রায় প্রস্তুত করে কিছুদিন খেলে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

৫. নাক কানের রক্তস্রাব:  শরীরের এই দু’টি দ্বার দিয়ে রক্ত ঝরতে থাকলে রক্তচন্দন সিন্ধ বা ভিজানো জল খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

৬. চষিপোকা লাগায়:  এটা সাধারণত  হাতের তালুতে হয়। এটাকে ক্ষুদ্রকুষ্ঠের মধ্যে ধরা হয়ে থাকে এ ক্ষেত্রেও রক্তচন্দনের কাঠ সিদ্ধ করে সেই জল খেতে হয় এবং তার সঙ্গে রক্তচন্দন ঘষা হাতের তালুতে লাগাতে হয়।

৭. কর্ণমুলের শোথ (Mumps): এ রোগে আক্রান্ত হলে রক্তচন্দন ঘন করে ঘষে কর্ণমূলে লাগাতে হয়, এর দ্বারা ব্যথা, ফুলা ও জ্বালা তিনটিই কমে যায়।

৮. ঘামাচি: শুকিয়ে চামড়া উঠে যাওয়ার মতো সর্বাঙ্গে এক প্রকার রোগ হয়। বাংলার কোনো কোনো অঞ্চলে একে ‘নুনছাল ওঠা’ রোগ বলে। এ ক্ষেত্রে রক্তচন্দন ঘষে গায়ে লাগালে ওটা সেরে যায়।

১০. বাতরক্তে: যেসব ক্ষেত্রে কোনো আঘাত না লেগে গায়ে লাল দাগ হয়, অনেকের আবার এর সঙ্গে ওইগুলিতে একটু ফুলা ও চুলকানি থাকে, সেখানে এই কাঠ ঘষে লাগালে এটা উপশম হয়।

১১ দাঁতের মাড়ির রক্ত পড়া: এই কাঠসিদ্ধ জল দিয়ে কুলকুচো করলে বন্ধ হয়। এমনকি ঘুমলে যাঁদের মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে, এর দ্বারা তারাও নিস্কৃতি পাবেন।

১২. মাথার যন্ত্রণায়:  এই যন্ত্রণা যদি কোনো বিশিষ্ট কারণে না হয়, তাহলে রক্তচন্দন কাঠ ঘষে কপালে লাগালে কমে যায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি তিন হাজার টাকা থেকে এই কাঠ বিক্রি শুরু হয়। ভারতে এই গাছ কাটা কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। তার পরেও পাচার হয়। পাচার রোখার জন্য ‘রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স’ও গঠন করা হয়েছে। ২০২১ সালে ৫০৮ কোটি রুপির রক্তচন্দন বাজেয়াপ্ত করেছে এই স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। গ্রেফতার হয়েছে ৩৪২ জন পাচারকারী।

চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চিনে। তাই পাচারও বেশি হয় ওই দেশে। আসবাব, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে এই কাঠের চাহিদা খুব বেশি চীনে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top