শুক্রবারের গুরুত্ব জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল

শুক্রবারের গুরুত্ব জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল

শুক্রবারের গুরুত্ব জুমার দিনের ফজিলত ও বিশেষ আমল : মুসলমানদের জন্য শুক্রবার একটি বিশেষ অর্থবহ দিন। অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের দানের সওয়াব যেমন বেশি তেমনি শুক্রবারের দান খয়রাত অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠদিন হল জুমার দিন।(মুসলিম)

মুসলমানদের জন্য শুক্রবার একটি বিশেষ অর্থবহ দিন। কিন্তু কি এর কারণ? কেনই বা শুক্রবারের গুরুত্ব এতো, তা হয়তো অনেকেই জানি না। আসুন জেনে নেই এর কারণে এটি বিশেষ অর্থবহ দিন এবং জানার চেষ্টা করি জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে।

১) শুক্রবার দিনে প্রথম মানুষ হযরত আদম(আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে।

২) এই দিনে হযরত আদম(আঃ) বেহেশতে স্থান দেয়া হয়েছে।

৩) এই দিনেই হযরত আদম(আঃ) পৃথিবীতে অবতরণ করেন।

৪) সপ্তাহের সাতটি দিনের মাঝে শুক্রবারই সে দিন, যেদিন হযরত আদম(আঃ) মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

৫) শুক্রবার দু’আ কবুলেরও দিন, তবে দুয়ায় নিষিদ্ধ/হারাম কিছু চাওয়া যাবে না।

৬) এই দিনেই হবে কিয়ামত।

৭) দিনের ছোট পাপ সমূহ ক্ষমা করে দেবেন।(মুসলিম)

৮) নামাজে এসে একটা পাথর স্পর্শ করাও অনর্থক কাজ বিবেচিত হবে।(মুসলিম) সন্মুখে জায়গা না থাকলে দুজনের মাঝে ফাঁক করে সামনে না যাওয়া।(বুখারী)

৯) জুমার দিনে গোসল করা সুন্নত।(বুখারী, মুসলিম)

১০) সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। (বুখারী)

১১) প্রথম ঘণ্টায় জুমায় গেলে ঊট কুরবানীর সওয়াব, দ্বিতীয় ঘন্টায় গরু কুরবানীর সওয়াব, তৃতীয় ঘন্টায় ছাগল বা ভেড়ার সওয়াব, চতুর্থ ঘন্টায় মুরগির সওয়াব, পঞ্চম ঘন্টায় একটি ডিমের সাওয়াব। (বুখারী, মুসলিম)

১২) এদিনে এমন এক সময় রয়েছে সে সময়ে আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া কবুল করেন।(বুখারী, মুসলিম)

১৩) রাসূল সাঃ এর উপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠানো, আল্লাহ তাআলা আমাদের দরুদ তাঁর সন্মুখে পেশ করিয়ে থাকেন।(আবূ দাউদ) একবার দরুদ পাঠালে আল্লাহ তাআলা দশবার রহমত প্রেরণ করবেন বান্দার উপর।(মুসলিম)

১৪) সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা, বিনিময়ে আল্লাহ দুই জুম’য়ার মধ্যবর্তী সময় নূর দ্বারা আলোকিত করবেন।(নাসাঈ, বাইহাক্বী)

১৫) উত্তম কাপড় পরিধান করা সুন্নত।(বুখারী, মুসলিম, আহমাদ)

১৬) মিসওয়াক করা, পরিচ্ছন্ন হওয়া সুন্নত।(আহমাদ)

এটি এমন একটি দিন যেদিন আল্লাহ তায়ালা, পরম করুনাময় আমাদের সগীরা(ছোট) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন, শুধুমাত্র ঐ দিনেরই নয় বরং পুরো সপ্তাহের এবং সাথে অতিরিক্ত আরো তিন দিনের।

সহীহ মুসলিমের হাদীসটি বর্ণিত হলঃ আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেন, “যদি কেউ যথাযথভাবে ওযু (পবিত্রতা অর্জন) করল, এরপর জুমার নামাযে আসলো, মনোযোগের সাথে খুতবা শুনলো এবং নীরবতা পালন করে, তার ঐ শুক্রবার এবং পরবর্তী শুক্রবারের মধ্যবর্তী সকল ছোটোখাট গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে, সাথে অতিরিক্ত আরো তিনটি দিনেরও”।(মুসলিম)। সুবহানাল্লাহ।

আল্লাহ তা’আলা কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! জুমার দিন যখন নামাজের আহ্বান জানানো হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে (মসজিদে) এগিয়ে যাও এবং বেচা-কেনা (দুনিয়াবি যাবতীয় কাজকর্ম ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা জানতে। (সূরা জুমা- ০৯)।

রাসুল (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।

এক হাদিসে নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম শরিফ , হাদিস নম্বর ৮৫৪)

মহানবী (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় আছে , কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায়, আর তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৪০০)

জুমার দিনের বিশেষ আমল

রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো, কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১০৪৭)।

এমনিতেই তিরমিজি শরিফের হাদিস অনুযায়ী আমরা জানতে পারি, যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তার ওপর ১০টি রহমত নাযিল করবেন। সুতরাং আমাদের জুমার দিন অন্যান্য আমলের সাথে সাথে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে।

 জুমার গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের উচিত এই দিনটিকে কাজে লাগানো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top