দুইবার ধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা

পরপর দুইবার ধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা

পরপর দুইবার ধর্ষণের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সাতক্ষীরায় চার দিনের ব্যবধানে দুবার ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার ভুক্তভোগী এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৩১ মে) রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকায় ভুক্তভোগীর চাচা মুনসুর আলীর বাড়ি থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এ বছর নবারুণ বালিকা বিদ্যালয় থেকে তার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল।

কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেকটর মিজানুর রহমান জানান, গত ৩ মে সাতক্ষীরার বনলতা হাউজিং কমপ্লেক্স এলাকায় এক সময়কার সহপাঠী হৃদয় হোসেন (২১) বাড়িতে নিয়ে চেতনানাশক খাইয়ে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে।

তিনি আরও জানান, গত ৭ মে সন্ধ্যার পর বাড়ির পেছনে এক নারীর সহযোগিতায় হৃদয় হোসেন তাকে আবারও ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। চার দিনের ব্যবধানে ভুক্তভোগী দুইবার ধর্ষিত হয়েছে এমন অভিযোগে তার বাবা আজিজুর রহমান বাদী হয়ে ৯ মে সাতক্ষীরা সদর থানায় হৃদয় হোসেন ও দুই নারীর নাম উল্লে­খ করে মামলা(২০) দায়ের করেন।

এরপর, পুলিশ মামলা রেকর্ড করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্ত দুই নারীসহ চারজনকে থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ভিকটিমের বক্তব্যের সাথে মামলায় বর্ণিত অভিযোগ প্রথমে গোলমেলে মনে হওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়। গত ১০ মে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেন ভুক্তভোগী। একই দিন সদর হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়। জানা গেছে, মামলা দায়েরর পর থেকেই ভুক্তভোগী বিমর্ষ ছিলেন।

ইন্সপেকটর মিজানুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভুক্তভোগীর লাশ তার বাড়ি সংলগ্ন ঢাকায় অবস্থানকারী চাচা মুনসুর রহমানের ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। মেয়েকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ রেখে চাবি তার বাবা আজিজুর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, মঙ্গলবার ভুক্তভোগীর বান্ধবী, পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ২ মে বিকেলে তার বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। ৩ মে ঈদের দিন সকালেও ভুক্তভোগী সেখানে গিয়েছিলেন।

এরপর, ৭ মে সকাল ১১টায় কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনস্পেকটর মিজানুর রহমান ফোর্সসহ গিয়ে ভুক্তভোগীর বান্ধবী ও নবারুন মহিলা কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীকে থানায় জিজ্ঞাসাদের জন্য নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গভীর রাতে সম্মান পড়ুয়া ছাত্রীকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও ভুক্তভোগীর বান্ধবীকে ৮ মে সকালে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদেরকে ছাড়াতে পুলিশের নাম করে স্থানীয় একটি চক্র মোটা অংকের টাকা আদায় করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার (৩০ মে) সকালে ভুক্তভোগীর বাবা আজিজুর রহমান জানান, তার মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে দুইবার। তিনি দেড় মাস যাবৎ তাবলিগ জামাতে ছিলেন। গত ৫ মে তিনি বাড়ি ফেরেন। তবে তার মেয়েকে ধর্ষণে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিবেশি যে নারীকে দায়ী করার সত্যতা মেলেনি।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগীর একটি প্রতিবন্ধী বোন রয়েছে। তাদের মা নেই। বাবা সন্তানদের ঠিকমত দেখভাল করেন না। ফুফু ময়না খাতুনের ছেলে আল আমিন ভুক্তভোগীকে ভয় দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণ করে আসছে বলে তারা জানেন।

এছাড়াও, ভুক্তভোগীর বাবা মেয়েকে বিভিন্ন সময়ে মারপিট করতো। ফলে কখনো কখনো ভুক্তভোগীকে ঘরের চালের উপরও রাত কাটাতে দেখেছেন তারা। ধর্ষণের শিকার হওয়ায় ভুক্তভোগী অন্তঃস্বত্বা ছিলেন বলে জানান তারা।

এলাকা সূত্রে আরও জানা যায়, ভুক্তভোগীকে প্রায়ই ঘুমের ঔধষ খাইয়ে রাখা হতো। মেয়েটি মানসিক বিষাদেও ভুগছিল।

পুলিশ ভুক্তভোগীর লেখা একটি চিঠি উদ্ধার করে গত ৭ মে। চিঠিতে উল্লেখ ছিল যে, ভুক্তভোগী দুইমাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিসচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, তিনি কিছু না জানলেও ৭ মে দুপুরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাকে থানা তকে ছেড়ে দেয়া হলেও পুলিশের নাম করে কতিপয় ব্যক্তির কাছে বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে তাকে।

ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা আব্দুল আলিম জানান, ভুক্তভোগীর ফুফুর বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও তার ছেলে আল আমিন তার এখানে মাঝেমাঝেই আসতো। বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগীকে আল আমিন উত্যক্ত করতো, ধর্ষণ করতো ও ভয় দেখিয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়াতো। তবে স্থানীয়দের দাবি, ধর্ষণের ফলে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়া ভুক্তভোগীকে হত্যা করা হতে পারে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গোলাম কবীর জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মৃতের বাবা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন। লাশের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানান তিনি।

সূত্র: যমুনা টিভি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top