জো বাইডেন এর জীবন কাহিনি:
জো বাইডেন কে?
জোসেফ রবিনেট জুনিয়ার নামটিতে ছোট করে ‘জো’ হিসাবে তুলে ধরে জো বাইডেন বলা হয়। মার্কিন ড্যামোক্র্যাটিক দলের সদস্য় বাইডেন আমেরিকায় বহুকাল অ্যাটর্নি হিসাহে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি পা রাখেন রাজনীতিতে। ডেলাওয়ারে তিনি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সেনেটর ছিলেন। মার্কিন রাজনীতিতে তিনি ৪৭ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক সফর আলোচনার আগে , দেখে নেওয়া যাক তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু দিক।
জো বাইডেন এর জীবন কাহিনি
সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রি করতেন বাইডেনের বাবা
ডেমোক্র্যাট দলের মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তার পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। ৭৭ বছর বয়সী বাইডেনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায়। তার পরিবার ছিল ক্যাথলিক ধর্মচর্চায় প্রচন্ড আগ্রহী। বাইডেনের জন্মের আগে তার বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলেও পরে দরিদ্রতার মুখে পড়েন। কোনো ভালো কাজ না পাওয়ায় বাইডেন পরিবার অর্থকষ্টে পড়ে। ডেলাওয়ারের উইলিংমটনে নতুন বাসায় ওঠেন তারা। এরপর বাইডেনের বাবা একসময় সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রির দোকানে কাজ শুরু করেন। মধ্যবিত্তের আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যেই বড় হন বাইডেন। স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন তিনি। ষাটের দশকের শেষ দিকে ডেমোক্র্যাট দলের রাজনীতির সমর্থন দিয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু জো বাইডেনের।
তোতলাতেন বলে স্কুলে তাকে নিয়ে হাসত সবাই
পুরো বিশ্ব মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি কৌশলের ওপর চোখ রাখে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট যা বলেন তা সংবাদ শিরোনাম হয়ে দাঁড়ায়। জো বাইডেনের কথাও সবাই শুনবে। কিন্তু ছেলেবেলায় কথা বলতে গেলেই তোতলাতেন বাইডেন। স্কুলে সহপাঠীরা তাকে নিয়ে খুব মজা করত। যাদের সঙ্গে খেলতে যেতেন তারাও তাকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তোতলামি কাটাতে কবিতা আবৃত্তি শুরু করেন বাইডেন। এক সময় তোতলামি কমে যায়। দরিদ্রতার কারণে শৈশবে নানা-নানীর বাসায় চলে যেতে হয় তাকে। স্কুলে খেলাধুলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলিও ছোটবেলা থেকেই ছিল তার। হাইস্কুল পর্যায়েও ‘ক্লাস লিডার’ ছিলেন বাইডেন। বিশ্ববিদ্যালয়েও ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে খ্যাতি ছিল তার। সেই বাইডেনই ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার হাত থেকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’অর্জন করেন।
যেভাবে শুরু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
জো বাইডেন মার্কিন রাজনীতিবিদ তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করেছেন । তিনিই হচ্ছেন ৪৬ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, ২০২১ সালের জানুয়ারি তে তিনি শপথ গ্রহণ করেছেন।
তার জীবনের কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াইকরে হার না মানা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জীবনীতে আমরা অনেক শিক্ষামূলক ও অনুপ্রাণিত ঘটনা জানবো।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রথম পা রাখলেও হোয়াইট হাউস তার আট বছরের চেনা, কারণ বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট কাল ২০০৯ থাকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলেছেন কৃতিত্বের সাথে।
রাজনীতির প্রতি বাইডেনের আগ্রহ ১৯৬১ সালের নির্বাচনের পর থেকেই। তবে নিজে রাজনীতিতে জড়ান আরও পড়ে। তত দিনে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার গোছাতে শুরু করেছেন বাইডেন। ডেলওয়ারের উইলমিংটনে একটি ল’ ফার্মে কাজ করেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই রাজনীতি নিয়ে সরব হন তিনি। রিপাবলিকান নেতার ল’ ফার্মে কাজ করলেও তিনি রিপাবলিকানদের রাজনীতির আদর্শকে সমর্থন করতেন না। সে সময়ে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রিচার্ড নিক্সনকে সমর্থন করতেন না বলে নিজেকে স্বতন্ত্র আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ১৯৬৯ সালে এক ডেমোক্র্যাট নেতার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে যান তিনি। এর জেরেই ডেমোক্র্যাট হিসেবে নিজেকে রেজিস্টার্ড করান। শুরু হয় ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন। অল্প সময়েই রাজনীতির মঞ্চে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন তিনি। পরের বছরই নিউক্যাসেল সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত হন বাইডেন। কাউন্সিলম্যান হওয়ার পরপরই ১৯৭১ সালে নিজের ব্যক্তিগত ল’ ফার্মও স্থাপন করেন তিনি। তার জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা চোখে পড়ে ডেমোক্র্যাট নেতাদের। পরের বছর ডেমোক্র্যাটিক পার্টি মাত্র ২৯ বছর বয়সেই বাউডেনকে মুখোমুখি করান রিপাবলিকান অধ্যুষিত এলাকায় সিনেট নির্বাচনে। বাউডেনের প্রতিপক্ষ ছিলেন সে সময়ের জনপ্রিয় সিনেটর রিপাবলিকান ক্যালেব বোগস। বাইডেনের বোন ভ্যালেরি বাইডেন ছিলেন ক্যাম্পেইন ম্যানেজার। এ ছাড়া তার বাবা-মা দুজনেই বাইডেনের হয়ে প্রতিদিন প্রচারণায় ছিলেন। বাইডেনের জনপ্রিয়তা থাকলেও কেউ আশা করেনি রিপাবলিকান নেতা ক্যালেব বোগসকে তিনি হারাতে পারবেন। কিন্তু নভেম্বরেই অঘটনের জন্ম দেন বাইডেন। ক্যালেবকে হারিয়ে ডেলওয়ারের সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। মার্কিন ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর হন বাইডেন।
জো বাইডেনের জন্ম হয় ১৯৪২ সালের নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে জো বাইডেনের বাবা ছিলেন সেই সময়কার একজন প্রতিষ্ঠিত তেল ব্যাবসায়ী।তার বাবার তেল শোধন করার ফ্যাক্টিরি ছিল।
তার জন্ম পেনিসেলভিয়ানিয়া রাজ্যের Scranton নামক একটি ছোট শহরে, তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে জো বাইডেন কে কঠিন পরিস্থিতির সামনা করতে হয়। কারণ তার বাবার প্রতিষ্ঠিত তেলের ব্যবসা তখন প্রায় লসে বন্ধ হওয়ার অবস্থা তার বাবা পরিস্থিতি বুঝে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করলেন, আর তিনি একটি গাড়ির শোরুম এ কাজ পেয়ে গেলেন।
University of Delaware থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি হিস্ট্রি ও পলিটিকাল সাইন্সে ডিগ্রি অর্জন করেন, ১৯৬৮ সালে তিনি লও পড়েন কিন্তু তার একাডেমিক স্কোর খুবই কম ছিল ৮৫ স্টুডেন্টের মধ্যে মেধা তালিকায় তিনি ছিলেন ৭৬ তম নাম্বারে।
তবে পড়ায় তার কম নম্বর পাওয়া তাকে জীবনে আটকে রাখতে পারেনি তিনি খেলাধুলায় খুব ভাল ছিলেন কলেজ জীবন থেকেই তিনি একজন পাবলিক স্পিকার হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকেন।
জো বাইডেন এর জীবন কাহিনি
তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে Joe Biden এর ছোট থেকেই Stuttering প্রবলেম রয়েছে এটি হচ্ছে কথা বলতে বলতে কিছু ক্ষণের জন্য আটকে যাওয়া ও মুখ থেকে শব্দ না বের হওয়া।
এই সমস্যা তাকে তার ক্যারিয়ার এ যেন বাধা সৃষ্টি করতে না পারে তারজন্য Biden আয়নার সামনে দারিয়ে নিয়মিত লেকচার প্রাকটিস করতেন কথা বলতেন, যাতে এই সমস্যা আর না হয় এবং সে এই প্রচেষ্টায় সফল হন।
জো বাইডেন আমেরিকার সর্ব কনিষ্ঠ সেনেটর দের মধ্যে একজন তিনি মাত্র ৩০ বছর বয়সে মার্কিন সেনেটর নির্বাচিত হন, কারণ বাইডেন খুব কম বয়সেই একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিলেন।
রাজনীতিতে বাইডেনের গুরুত্বপূর্ণ বছর
জো বাইডেন ১৯৬৯ সালে অ্যাটর্নি হন, ১৯৭০ সালে কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭২ এ প্রথমবার সেনেটে। এরপর পরের পর ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৮ সালে সেনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন জো। নিজের কার্যকালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরাক নিয়ে পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতেও ছাড়েননি বাইডেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ
২০০৭ সালে বাইডেন ফের একবার মার্কিন তখতের লড়াইতে ভোট যুদ্ধের আঙিনায় নামেন। এর আগে ২০ বছর আগে তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার লড়াইয়ে নেমেও ব্যাকফুটে চলে যান। হিলারি ক্লিন্টনের পোক্ত জমিতে বাইডেন সেবারেও দাঁত ফোটাতে পারেননি। তবে এরপর ফোন আসে স্বয়ং ওবামার কাছ থেকে। ২০০৮ সালের রিপাবলিকান সেনেটার জন ম্যাকেন, ও আলাস্কার গর্ভনর সারাহ পালিনকে হারিয়ে ২০০৯ সালে ২০ জানুয়ারি বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। এরপর ২০১২ সালেও একই পদ তিনি ধরে রাখেন।
জো বাইডেন এর বাবা-মা: বাবা
জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। তাঁর মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
জো বাইডেন এর শিক্ষা
বাইডেন ডেলাওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে ডিগ্রি নেন।
বাইডেন এর পরিবার:
সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় বাইডেন ১৯৬৬ সালের নিলিয়া হান্টারকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে তিন সন্তান রয়েছেন—জোসেফ আর ‘বিউ’ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা। নিলিয়াকে তিনি বলেছিলেন, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। সিনেটর হওয়ার পর তাঁর লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া। ১৯৭২ সালে বড় দিনের আগে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে গিয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিলিয়া নিহত হন। পরে ১৯৭৩ সালে বাইডেন জিল ট্রেসি জ্যাকবকে বিয়ে করেন। তাঁদের ঘরে অ্যাশলে ব্লেজার নামে এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ২০২০:
২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক ভিডিওবার্তায় বাইডেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রাইমারিতে লড়াইয়ের আভাস দেন। দলীয় প্রাইমারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিস (যিনি তাঁর বর্তমান রানিংমেট), ভারমন্টের সিনেটর উদারপন্থী বার্নি স্যান্ডার্স, ম্যাসাচুসেটসের এলিজাবেথ ওয়ারেন, পেটি বুটেগিগ, অ্যামি ক্লুবেচারকে পেছনে ফেলে তিনি ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। জাতীয় পর্যায়ে বেশির ভাগ জনমত জরিপে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
জো বাইডেন এর ধর্ম:
জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত প্রথম কোন রোমান ক্যাথলিক বিশ্বাসী। আর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত প্রথম কোন রোমান ক্যাথলিক। তার আগে জন এফ কেনেডি ছিলেন প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট।
জো বাইডেন ছিলেন সর্বোচ্চ ভোটারপ্রিয় প্রার্থী
২০০৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামা ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫শর বেশী ভোট পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশী ভোটারপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে একই দলের প্রার্থী জো বাইডেন ৭ কোটি ২১ লাখ ৫৭ হাজারেরও বেশী ভোট পেয়ে সর্বোচ্চ ভোটারপ্রিয়তার স্বাক্ষর রাখলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে শূন্য ভোট পাওয়ার রেকর্ড থাকলেও এখন পর্যন্ত এত বেশি ভোট পেয়ে কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। তবে জনপ্রিয়তার বিবেচনায়, ১৭৮৮ সাল এবং ১৭৯২ সালের উভয় নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ও পপুলার, উভয় ভোটেই নির্দলীয় প্রার্থী জর্জ ওয়াশিংটনের শতভাগ ভোটপ্রাপ্তিই একমাত্র বিরল ঘটনা। পরবর্তীতে কোন প্রার্থী কোন ভোটের কোন পদ্ধতিতেই শতভাগ ভোট পাননি।
বাংলায় জো বাইডেন এর বই সমূহ
প্রমিয মি ড্যাড (হার্ডকভার)
Promise Me Dad (Paperback)
প্রমিজ মি, ড্যাড
জিলকে কতবার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাইডেন?
সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তখন ৩৩ বছর বয়সী সিনেটর। আর ২৪ বছর বয়সী জিল বাইডেন কলেজ জীবনের শেষ পর্যায়ে। এমন সময়ই জিলকে দেখে প্রেমে পড়ে যান বাইডেন। যথারীতি প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু কাজ হয়নি। তার ডাকে প্রথমেই সাড়া দেননি জিল।
ব্যর্থ হয়ে আবারও জিলকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু দ্বিতীয়বারও কোনো লাভ হয়নি। তবে কোনোভাবেই জিলের পিছু ছাড়েননি বাইডেন। একে একে পাঁচবার প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তারপর সবকিছু বিবেচনা করে যখন জিল দেখলেন জো বাইডেন একজন ‘ভদ্রলোক’ তখন আর না করতে পারলেন না।
জিল বাইডেন ও জো বাইডেনের শুরুর গল্পটা এমনই রোমাঞ্চকর। তবে এর আগের কাহিনী একটু বিষাদেরও। তাদের দুজনেরই বিয়ে হয়েছিলো। জিলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার আগে ১৯৭২ সালে জো বাইডেনের স্ত্রী ও কন্যা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। রেখে যান দুই ছেলে। জিলের সঙ্গে সম্পর্কের আগে একা একা দিন কাটছিলো বাইডেনের।
এদিকে জিলেরও কলেজ জীবনের শুরুতেই বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সেই সংসার টিকেনি। কলেজের সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় বিল স্টিভেনসনের সঙ্গে তাকে বেশিদিন থাকতে হয়নি।
১৯৭৭ সালে ফিলাডেলফিয়ায় ‘অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা উইম্যান’ চলচ্চিত্র দেখতে গিয়ে জিল আবিস্কার করেন জো বাইডেন একজন ‘ভদ্রলোক’। সেখানেই পঞ্চমবারের মতো জিলকে প্রেমের প্রস্তাব দেন বাইডেন।
প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর ওই বছরেই তারা বিয়ে করেন। তারপর শুরু পথচলা। ৪৩ বছর এক ছাদের নিচে কাটিয়ে দিয়েছেন তারা। ১৯৮১ সালে তাদের ঘর আলোকিত করে আসে কন্যা এ্যাশলি। দীর্ঘ পথচলায় বাইডেনের জীবনে উত্থান-পতন এসেছে। বাইডেনের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই নারী।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে পরবর্তী মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনের জীবনী থেকে এমনটিই জানা যায়। সেখানে জিল জানান, বাইডেনের প্রস্তাব গ্রহণ করার আগে আমি তাকে পাঁচবার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। কারণ আমি নিশ্চিত করতে চাইছিলাম যে তার সন্তানেরা যাতে আরেকটি মা না হারায়।
হাল না ছাড়া মানুষ জো বাইডেন
৭৭ বছরের জীবনে সুদীর্ঘ প্রায় ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তাঁর। হোয়াইট হাউসে যাবার যে স্বপ্ন বহুদিন থেকে লালন করে আসছেন, সেই স্বপ্নের পথ এখন লড়াইয়ে লিপ্ত! ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তেজনাকর নির্বাচনে ম্যাজিক ফিগারের কাছাকাছি বাইডেন।
১৯৮৭ সালে একবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে নামলেন। ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে, তিনি অন্যের লেখা চুরি করে নিজর নামে চালিয়েছেন!
এই অভিযোগের সূত্র ধরে আরেকটা অভিযোগ সামনে আনা হয়, ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা। তখন তিনি আইনের ছাত্র হিসাবে তার সাইটেশন পেপারে আরেকজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, সেটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না। এমন অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন!
জো বাইডেন এর জীবন কাহিনি
পরে তাঁর এক জীবনীকারকে মি. বাইডেন বলেছিলেন, “ওই ঘটনা আমাকে কুরে কুরে খেয়েছে। নিজেকে আমি চিরকাল একজন সৎ মানুষ হিসাবে মনে করেছি। সেই জায়গাটায় বিরাট একটা ধাক্কা খেয়েছিলাম।”
আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, “এর জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো যে এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। ওটা শুধু মস্ত একটা ভুল ছিল!”
এরপর স্বজন হারানো, স্ত্রী-পুত্রবিয়োগ, নিজের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ সহ নানা সংকটে আর ২০ বছর নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করেন বাইডেন। এর মাঝে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন তাঁর চেয়ে বয়সে কনিষ্ঠ অনেকেই, যেমন- বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প!
২০০৮ সালে আবার দলীয় মনোনয়নের দৌঁড়ে নামলেন। তবে বারাক ওবামার সঙ্গে পেরে উঠেননি। যদিও ওবামার পরে তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে নেন।
ফের ২০১৬ সালের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাননি, হিলারির কাছে হেরে যান। তখন প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কিন্তু হাল ছাড়েননি জো বাইডেন! তার স্বপ্ন হলো একদিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। অবশেষে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন লাভ করলেন। সেখানেও অনিশ্চয়তা ছিলো। পেতে পেতেই যেন হেরে যাচ্ছিলেন। তবে একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে মনোনয়ন পান।
এমনই হাল না ছাড়া মানুষ জো বাইডেন। তাঁর জীবনী পড়ে অভিভূত মানুষ। এতো দীর্ঘ সময় ধরে একজন মানুষ কীভাবে স্বপ্ন লালন করতে পারে তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।
তিনি প্রায়ই একটি কথা বলেন, “বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসাবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।”
এমন সংগ্রামমুখর যার জীবন, এমন সুন্দর কথা যিনি বলেন, তাঁরই হওয়া উচিত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
জো বাইডেন এর জীবন কাহিনি
বাইডেন এর কিছু অজানা কাহিনি
১) তিনি তাঁর হাই স্কুল ফুটবল দলে খেলেছেন। মিঃ বাইডেন ২২ গজের দলে প্রশস্ত রিসিভার এবং রক্ষণভাগে খেলতেন।
২) বাইডেন কুকুর প্রেমীও। তাঁর কাছে রয়েছে দুটি জার্মান শেফার্ড। নাম চ্যাম্প এবং মেজর।
৩) গাড়ির প্রতিও রয়েছে তাঁর ভাললাগা। তাঁর কাছে এখনও রয়েছে 67 Corvette Stingray। যা তাঁর বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন তিনি।
৪) লেখালেখি করতেও পছন্দ করেন জো বাইডেন।
৫) ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে বাইডেনের স্ত্রী নীলিয়া এবং তাদের এক বছরের কন্যা অ্যামি একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়।
৬) জো বাইডেন প্রথমবারের মতো সিনেটে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তবে ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার পরিবর্তে তিনি উইলমিংটন থেকে প্রতিদিন ট্রেনে চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যাতে তিনি তাঁর ছেলের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে পারেন।
৭) গাড়ি দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও কন্যাকে হারানোর পরে জো বাইডেন তাঁর ছেলের হাসপাতালের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে শপথ নিয়েছিলেন।
জো বাইডেন এর জীবন কাহিনি
৮) ছোট থেকে তাঁর কথা জড়িয়ে যেত। সঠিকভাবে স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না।
১১) জো বাইডেন আইসক্রিম পছন্দ করেন এবং তাঁর প্রিয় পদ চকোলেট চিপস।
Joe Biden Life History : https://en.wikipedia.org/wiki/Joe_Biden
আইস্টাইন এর জীবনি: https://www.nittosongbad.com/lifestyle/