করোনা মহামারী মোকাবেলা করে ইতিবাচক ধারায় ফিরে এসেছে ভারতের অর্থনীতি : ভয়াবহ করোনা মহামারীর ছোবল এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ভারতের বৈদেশিক বানিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। বিশেষ করে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষে ২০২২ সালের মার্চে এসে মোট রপ্তানির পরিমাণ নতুন রেকর্ড গড়ে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে দেশটি। যেখানে ২০২১-২২ পুরো অর্থবছরে ভারতের সরকার ৪০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
এদিকে ভারতের বৈশ্বিক রপ্তানি বিষয়ক এক পরিসংখ্যানের তথ্য থেকে জানা যায় যে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ মাসে ভারত ৩৮৯.৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে মোট ৩২৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও সেবা সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। সে হিসেবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩৭% এবং প্রতি ঘণ্টায় ৪৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা সারা বিশ্বে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে দেশটি।
অবশ্য ভারত কিন্তু ২০২০-২১ (১ এপ্রিল/২০২০ থেকে ৩১শে মার্চ/২০২১ পর্যন্ত) ভারত মোট ৩৯৪.৪৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্ব থেকে আমদানি করে এবং ঠিক একই সময়ে ২৯১.৮০ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। ভারতের বৈশ্বিক আমাদানি রপ্তানি বানিজ্যে কিছুটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হলেও উচ্চহারে রেমিট্যান্স আয় এবং পর্যটন শিল্প খাত থেকে বড় ধরণের আয়ের সুবাদে দেশটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৬৩১.৯ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। যদিও একই সময়ে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সোনার রিজার্ভের আর্থিক মূল্য ছিল ৪১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩৩.৮৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। যা মার্চে এসে কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৬৩১.৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
যদিও অবশ্য ভারতের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমান চলতি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে প্রায় ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার হয়। যেখানে ২০২১ সালের জুন মাসে ভারতের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ৫৭১.৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত হিসাব কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। আবার বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয় অর্জনকারী দেশ হিসেবে ২০২১ সালের পুরো ১২ মাসে ভারতের প্রবাসী কর্মীরা ৮৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন। যা ছিল একক কোন দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয়। আর রেমিট্যান্স আয় ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরণের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বিগত চার দশক থেকে।
ইউকীপিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালে ভারতের নমিনাল জিডিপি ৩.২৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং সার্বিক মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায় ৬.৫%। যদিও দেশটি করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ২০২২ সালে ৮.৫% হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে বলে আশা করছে ভারত। তাছাড়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের গড় বেকারত্বের হারও অনেকটা কমে এসে ৮.১% এসে ঠেকেছে।
লেখক: সিরাজুর রহমান।