পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো , পাক-ভারত ইতিহাস

পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো , পাক-ভারত সৃষ্টির ইতিহাস

পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো,১৯৪৭ সালে হিন্দুরা সমগ্র ভারত জুড়ে আন্দোলন করলেও কিভাবে তাদের আন্দোলনকে মাটিচাপা দিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলো?

সংক্ষিপ্ত উত্তরঃ

হিন্দুদের উগ্র সাম্প্রদায়িকতা এবং মুসলমানদেরকে কোণঠাসা করা।

কংগ্রেসের ঘণ ঘণ রাজনৈতিক ডিগবা

বিস্তারিত উত্তরঃ

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কংগ্রেসের একজন সিনিয়র নেতা ছিলেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর “সত্যগ্রহ” নীতি না মানার কারণে তাঁকে কংগ্রেসে কোণঠাসা করে সাইডলাইনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে 1920 সালে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করে লন্ডলে চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করতে থাকেন।

ইতোমধ্যে 1937 সালে সারা ভারতে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং মুসলিম লীগ সম্পুর্ণভাবে পর্যুদস্ত হয়। নির্বাচনের আগে অনেক ভাল ভাল কথা বললেও নির্বাচনের পরে কংগ্রেস তার আসল হিন্দুয়ানী চেহারা নিয়ে হাজির হয় মুসলমানদের সামনে।

এতে করে মুসলমানদের টনক নড়ে এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ লন্ডন থেকে ফিরে মুসলিম লীগকে সাথে নিয়ে “পাকিস্তান আন্দোলন” শুরু করেন।

পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো

ঐক্যমত্যের মন্ত্রীসভা গঠনে কংগ্রেসের পল্টিবাজীঃ

1935 সালের “ভারত সরকার আইন” জারি হওয়ার আগে, 1930–1932 এর গোলটেবিল আলোচনায় মুসলিমরা বিভিন্ন প্রাদেশিক মন্ত্রণালয়ে মুসলিম প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক আইন দাবী করে। হিন্দু নেতারা ও ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা মোটের উপর তা মেনে নেয় এবং এতে মুসলমানরা আশ্বস্তও হয়। মুসলিমরা আশা করেছিল যে প্রাদেশিক সরকারগুলোতে মুসলিম সম্প্রদায়ের আস্থাভাজন ব্যাক্তিদেরকে নিয়ে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে মন্ত্রীসভা গঠন করা হবে।

নির্বাচনে জেতার পরে সম্পূর্ণ পল্টি মারে কংগ্রেস। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া প্রদেশেগুলোতে তারা মুসলিম লীগের সঙ্গে জোটে না যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।

পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো

যেমনঃ সব চেয়ে বড় প্রদেশ, যুক্তপ্রদেশে, কংগ্রেস নেতারা মন্ত্রিসভায় মুসলিম লীগের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে শর্ত দেয় যে – জোটে আসলে মুসলিম লীগ গ্রুপ একটি পৃথক গ্রুপ হিসাবে থাকতে পারবে না, এবং যুক্তপ্রদেশে অ্যাসেম্বলিতে মুসলিম লীগের বিদ্যমান সদস্যদেরকে কংগ্রেস পার্টিতে ঢুকতে হবে।” কংগ্রেসের এই আজগুবি প্রস্তাবে সম্মত হলে মুসলিম লীগের কোন অস্তিত্ব থাকে না বলে তারা বিরোধী দল হিসাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে, কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে সহযোগিতার সমস্ত আশা বানচাল হয়ে যায়।

কংগ্রেস কর্তৃক মুসলিম লীগকে স্যাবোটাজঃ

যে প্রদেশ গুলোতে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, সেগুলোতে তারা শয়তানি শুরু করে দেয় – নির্বাচনে জেতা মুসলিম লীগের সদস্যদেরকে ভাগিয়ে নিয়ে তারা হিন্দু নিয়ন্ত্রিত সরকার গঠন করার চেষ্টা শুরু করে।

যেমনঃ আসাম এবং সিন্ধু প্রদেশে কংগ্রেসের এই শয়তানী সফল হয়। আসামে স্যার সৈয়দ সাদুল্লাহ-এর মন্ত্রীসভা ভেঙে যায়, এবং সিন্ধুতে কংগ্রেসের নেত্রিত্তে হিন্দু-মুসলিম কোয়ালিশন সরকার গঠন হয়।

পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো

কংগ্রেসের উপর হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণঃ

কংগ্রেসে বেশ কিছু মুসলিমও ছিল যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (যিনি উলামাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন) এবং ছিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের নেতা আবদুল গাফফার খান। তবে, এতে কংগ্রেসের হিন্দুয়ানী চরিত্রে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি।

যেমনঃ 1936 সালে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির 143 জন সদস্যের মধ্যে মুসলমান ছিল মাত্র 6 জন – উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে ছিল তিনজন, যুক্ত প্রদেশ থেকে ছিল একজন এবং বিহার থেকে ছিল একজন ; ষষ্ঠ ছিলেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো

এক পার্টির আধিপত্যঃ

শুরু থেকেই কংগ্রেস দাবি করে আসছিল যে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেশে তারা সমস্ত ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব করে।

নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ে জয়ী হবার পরে কংগ্রেসের নেতারা কংগ্রেসকে একমাত্র জাতীয় সংগঠন হিসাবে প্রচার করা এবং অন্য সকল রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব অস্বীকার করা শুরু করল।

কার্যত এটি ছিল ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া ক্ষমতার একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করার একটি কূট প্রচেষ্টা মাত্র।

.পাকিস্থান যেভাবে সৃষ্টি হলো

সরকারীভাবে মুসলমানদের উপর হিন্দুত্ব চাপিয়ে দেয়াঃ

প্রশাসনে মুসলমানদের সুষম সুযোগ এবং ন্যায্য স্থান থেকে বঞ্চিত করা হয়। হিন্দু রাজ এবং হিন্দু সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রতীক সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতীক হিসাবে গৃহীত হয়।

হিন্দুয়ানী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যা মন্দির পদ্ধতি চালু করা হয়। উর্দু স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয় বা হিন্দি স্কুলগুলির সাথে একীভূত করা হয়। বিদ্যালয়ের পড়াশোনা শুরু হতো কংগ্রেসের পতাকাকে অভিবাদন দিয়ে, “বন্দে মাতরম” নামক একটি কুখ্যাত মুসলিম বিরোধী গান গেয়ে, এবং গান্ধীর প্রতিকৃতির পূজা – যেগুলো ছিল মুসলমানদের জন্য ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ।

গরু রক্ষার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ নেয়ার ফলে দরিদ্র মুসলমানদের উপর চরম অর্থনৈতিক আঘাত আসে। মুসলমানরা এমন এক পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়, যা ছিল মুসলমানদের কাছে আগে অজানা।

.

ভাষা নিয়ে গান্ধীর পল্টিবাজীঃ

হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ধব্জাধারী গান্ধী শুরুর দিকে প্রায়ই প্রকাশ্যে বলতেন যে উর্দু এবং হিন্দি আসলে একই ভাষা—হিন্দুস্তানী—যা ফার্সী এবং দেবনাগরী উভয় লিপিতে সমানভাবে লেখা সম্ভব। সে সময় তিনি নিজে উর্দু লিপি শেখেন এবং সবাইকে উভয় লিপি শেখারও পরামর্শ দেন।

এখন তিনি তার বক্তব্য পালটে ফেললেন। তিনি বলা শুরু করলেন যে উর্দু কোরানের লিপিতে লেখা বলে এটি মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা এবং হিন্দি বা হিন্দুস্তানী হচ্ছে ভারতীয়দের জাতীয় ভাষা।

ফলে হিন্দিকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া শুরু হয় এবং হিন্দি দিয়ে উর্দুকে প্রতিস্থাপন করার একটি সুসংহত প্রচেষ্টা হাতে নেয়া হয়। শেষে, এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে হিন্দুস্তানী শব্দটিকেও বাদ দেওয়া হয়, এবং হিন্দিকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়।

(to be continued…)

রেফারেন্সঃ-

Ali, Chaudhry Muhammad, Emergence of Pakistan, Columbia University Press, 1967 (Reprinted in 1972 by the Research Society of Pakistan, University of the Punjab, Lahore) [পৃষ্ঠাঃ ২৮-৩১]…

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top