গত ২০২১ সালের শেষের দিকে ইরান তার চীর শত্রু ইসরাইলের পারমাণবিক স্থাপনার ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তবে এই হামলাটি কিন্তু বাস্তব কোন হামলা ছিল না। বরং ইরানের মরুভূমিতে ডামি বা নকল একটি ইসরাইলের মক পারমাণবিক স্থাপনা তৈরি করে তাতে প্রায় ১৬টি বা তার বেশি সংখ্যক ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং কমব্যাট ড্রোন হামলা চালিয়ে একেবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় ইরানের (আইআরসিজি) বিপ্লবী বাহিনী। মুলত ইরানের (আইআরসিজি) বিপ্লবী বাহিনীর ৫ দিন ব্যাপী সামরিক মহড়ায় শেষ দিনে ডামি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে ইসরাইলকে এক কঠোর সতর্ক বার্তা দিতে চাচ্ছে ইরান। আর এ সংক্রান্ত বেশকিছু সংখ্যক ভিডিও ইউটিউবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে তার ঠিক মাস খানেক আগে ইরান আবার ইসরায়েলে সামরিক হামলার একটি মানচিত্র প্রকাশ করে প্রচার চালায়। আর এই প্রচারের শিরোনাম ছিল ‘শুধু একটি ভুল পদক্ষেপ!’। এটির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় একটি ‘ইসরায়েলি বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুর মানচিত্র’। যাতে ইসরায়েলের প্রায় প্রতিটি জনবহুল স্থানকে লাল বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যদি ইসরায়েল ইরানের উপর সামরিক আগ্রাসন চালায়, তবে ইরান তার জবাবে কোথায় কোথায় পালটা মিসাইল হামলা চালাবে তার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
যদিও এটিকে আমি ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর অতি নবতর প্রপাগাণ্ডা ছাড়া আর কিছুই মনে করছি না। কারণ সিরিয়ায় ইসরায়েল প্রতি মাসেই এক রকম নিয়মিতভাবেই প্রকাশ্যেই বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এই বিমান হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে সিরিয়ায় থাকা ইরানের গোপন সামরিক ঘাটি, স্থাপনা এবং রসদ সরবরাহ ব্যবস্থা। ইসরায়েলে কিন্তু এই বিমান হামলায় একেবারে বেছে বেছে সিরিয়ায় থাকা ইরানের সামরিক বাহিনীর অবস্থান টার্গেট করে থাকে। তবে বিমান হামলার ক্ষেত্রে ইসরাইল কিন্তু সব সময়ই সিরিয়ায় থাকা রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি এবং এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে এড়িয়ে চলে।
সিরিয়ায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য ইরানী সেনা ও স্বেচ্ছাসেবী মিলিট্যান্ট মারা গেলেও ইরানের মিডিয়া ও তার প্রশাসন মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। তাছাড়া সিরিয়ায় ইসরাইলের বিমান হামলার পালটা শক্ত জবাব আজ পর্যন্ত দিতে না পারলেও ইরানী মিডিয়ায় প্রতিদিন সাতবার করে ইসরাইল ও আমেরিকাকে ধ্বংস করে ফেলে। তাছাড়া ইউটিউবে ইসরাইল ও আমেরিকা ধ্বংসের অসংখ্য প্রপাগাণ্ডা ভিডিও ছেড়ে দিয়েছে ইরান।
এদিকে সিরিয়ায় থাকা ইরানের সামরিক ঘাঁটি, স্থাপনা এবং অস্ত্র গুদামে ইসরাইলের নিয়মিত বিমান হামলায় এ পর্যন্ত মোট কতজন সেনা ও স্বেচ্ছাসেবী মৃত্যুবরণ করেছেন তার কোন সঠিক তথ্য বা পরিসংখ্যান পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে খুব সম্ভবত ২০১৯-২০ সালের দিকে ইরানের কিছু ওয়েবসাইট এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হয় যে, সিরিয়াতে থাকা ইরানের সামরিক উপদেষ্টা এবং ইরানের বিপ্লোবী বাহিনী (আইআরজিসি) সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানের সেনা ও স্বেচ্ছাসেবী সদস্য নিহতের তালিকা দেয়। তাতে তারা জানায় যে, ২০১১ সাল থেকে চলমান সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ইরানের প্রায় ৮-১০ হাজারের কাছাকাছি ইরানী সেনা ও স্বেচ্ছাসেবক মিলিট্যান্ট মৃত্যুবরণ করেছেন।
তাছাড়া বছর খনেক আগে সিরিয়ায় নিযুক্ত ইরানী সেনাদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েক বার বিক্ষোভ করেছিল। তার মূল কারণ সিরিয়ায় নিযুক্ত হওয়ার পরে সেই সেনার আর কোন দিনই খোঁজ পাওয়া যায় নি। এ নিয়ে ইরানের সরকারের তরফে কোন ধরণের তথ্য জন সম্মুখে আজ অব্ধি প্রকাশ করা হয়নি। তাছাড়া সিরিয়ায় নিহত সব সেনার মৃতদেহ তার পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয় না এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে অত্যন্ত কৌশলে তথ্য লুকাচ্ছে ইরানের সরকার।