আদা চাষ পদ্ধতি – বীজ রোপন, উপযুক্ত মাটি, সার এবং রোগ নির্ণয়
আদা একটি উদ্ভিদ মূল যা মানুষের মসলা এবং ভেজষ ঔষুধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে আদা অন্যতম। বর্তমানে আদা চাষ বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আসুন জেনে নিই যে পদ্ধতিতে আদা চাষে শতভাগ সফলতা আসে:
জমি ও মাটি নির্বাাচন: পানি নিকাশের সুব্যবস্থা আছে এমন উঁচু বেলে-দো-আঁশ ও ও বেলে মাটি আদা চাষের জন্য উপযোগী।
বীজ রোপণ: ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত লাগানো যায়। সাধারণত ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২টি কুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ
পানি নিকাশের সুব্যবস্থা আছে এমন উঁচু বেলে-দো-আঁশ ও ও বেলে মাটি আদা চাষের জন্য উপযোগী।
বীজ রোপণ:
ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত লাগানো যায়। সাধারণত ১২-১৫ গ্রাম ওজনের ১-২টি কুঁড়ি বিশিষ্ট কন্দ লাগানো হয়। ৪০-৪৫ সে.মি. দূরে দূরে সারি করে ২০ সে.মি. দূরে ৫ সে.মি. গভীরে আদা লাগানো হয়। কন্দ লাগানো পর ভেলী করে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ১০০০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
সার ব্যবস্থাপনাঃ
আদার ভাল ফলন পেতে হলে জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে প্রতি হেক্টরে গোবর সার ৪-৬ টন, ইউরিয়া ২০০-২৪০ কেজি, টিএসপি ১৭০-১৯০ কেজি, এমওপি ১৬০-১৮০ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। জমি প্রস্তু’তির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি ও ৮০-৯০ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করতে হয়। কন্দ লাগানোর ৫০ দিন পর ১০০-১২০ কেজি হারে ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। লাগানোর ৯০ দিন ও ১২০ দিন পর যথাক্রমে ২য় ও ৩য় কিস্তি-র সার উপরি প্রয়োগ করা হয়। ভেলা সামান্য কুপিয়ে ১ম কিস্তি-র সার প্রয়োগ করে আবার ভেলা করে দিতে হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তি-র উপরি প্রয়োগের সময় প্রতি হেক্টরে প্রতিবারে ৫০-৬০ কেজি ইউরিয়া ও ৪০-৪৫ কেজি এমওপি সার প্রয়োগ করা হয়। ২য় ও ৩য় কিস্তি-র সার সারির মাঝে প্রয়োগ করে মাটি কোঁদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সামান্য পরিমাণ মাটি ভেলীতে দিতে হয়।
জাত পরিচিতিঃঅনুমোদিত কোন জাত নেই। তবে স্থানীয় জাত যেমন-রংপুরী, খুলনা, টেংগুরা জাত চাষ করা হয়।
রোগ ব্যবস্থাপনা:
রোগের নাম : রাইজম রট
রোগের কারণ : পিথিয়াম এফানিডারমেটাম নামক ছত্রাক ।
ভূমিকা : এ রোগ রাইজমে আক্রমণ করে বলে আদা বড় হতে পারে না ও গাছ দ্রত মরে যায় ফলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
ক্ষতির নমুনা : প্রথমে পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু’ পাতায় কোন দাগ থাকে না।
– পরবর্তীতে গাছ ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে মরে যায়।
– রাইজম (আদা) পচে যায় ও ফলন মারাত্মক ভাবে কমে যায় ।
অনুকুল পরিবেশ : ভেজা ও স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় এ রোগ বেশী দেখা যায়। বর্ষাকাল বা জলাবদ্ধতা থাকলে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
বিস্তার : এ রোগ বীজ, পানি ও মাটির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থপনা :
– অর্ধপচা মুরগীর বিষ্ঠা প্রতি হেক্টরে ১০ টন হারে আদা লাগানোর ২১ দিন পূর্বে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
– অনুমোদিত ছত্রাক নাশক মাটি হালকা কুপিয়ে মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
পুষ্টিমূল্যঃ আদায় ক্যালসিয়াম ও প্রচুর ক্যারোটিন থাকে।
ফসল সংগ্রহঃআদা লাগানোর ৯-১০ মাস পর উঠানোর উপযোগী হয়। গাছের প্রায় সব পাতা শুকিয়ে গেলে আদা তোলা হয়। ফলন প্রতি হেক্টরে ১২-১৩ টন।
আদার কন্দ পঁচা রোগ দমনে যা করতে হবে
এ রোগের লক্ষণ: প্রাথমিকভাবে এ রোগে গাছের নিচের দিকের পাতার অগ্রভাগ হলুদাভ দেখায়। পরে উপরে ও নীচের সমস্ত পাতা হলুদ হয়ে ঝিমিয়ে পড়ে। পঁচনের ফলে কন্দ নরম হয়ে ফুলে উঠে। পঁচা গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে রাইজম ফ্লাই নামক পোকা আদায় আক্রমণ করে। আক্রান্ত গাছ টান দিলে সহজে উঠে আসবে।
দমন ব্যবস্থাপনা: রোগ প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথে কান্ড ও মাটির সংযোগস্থলে ব্লাইটক্স ৫০ এক লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করুন। এর ১০ থেকে ১২ দিন পর রিডোমিল গোল্ড এক লিটার পানিতে ৪ গ্রাম অথবা সিকিউর এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
এভাবে পর্যায়ক্রমিকভাবে ৪-৫ সপ্তাহ পর্যন্ত স্প্রে করুন। পঁচা দূর্গন্ধ রেড় হলে রাইজম ফ্লাই পোকা দমনের জন্য ডাসবান ১০জি বা সেভিন এক লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করুন। এছাড়া আক্রান্ত গাছ রাইজোমসহ সম্পূর্ণরূপে তুলে ধ্বংস করতে হবে।
পরবর্তী মৌসুমে করণীয়: একই জমিতে বার বার আদা চাষ না করা। ব্যাভিস্টিন বা অনুমোদিত যেকোন ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজকন্দ শোধন করে রোপণ করা। এছাড়া আদা চাষের জন্য উঁচু সুনিষ্কাশিত সুবিধাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে।
বিস্তারিত পরামর্শের জন্য কাছের উপজেলা কৃষি অফিস অথবা উপসহকারি কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন। তাছাড়া কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে শুক্রবার ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফোন করে বিস্তারিত জেনে নিন। সূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস।